২০১৭ সাল। ডিম দিবস উপলক্ষে প্রতিটি ডিম তিন টাকায় বিক্রির আয়োজন করে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর । সকাল থেকে ডিম কিনতে ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে জড়ো হয় শতশত মানুষ। বেলা ১১টায় ডিম বিক্রি শুরু হলে স্বাভাবিক নিয়মে সবাই ডিম কিনতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হতে থাকে। হাতিহাতি গড়ায় মারামারিতে। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। আলোচিত এই ঘটনার কথা হয়ত অনেকের মনে আছে।
প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার উদযাপিত হয় ‘বিশ্ব ডিম দিবস’। আজ শুক্রবার সেই ডিম দিবস দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে। তবে ২০১৭ সালে যে দামে ডিম বিক্রি হয়েছিল প্রায় ২০ থেকে ২৪ টাকা হালি দরে, বর্তমানে সেই ডিমের দাম এখন দ্বিগুণেরও বেশি, যা বর্তমানে ১৫০ টাকা ডজন বা ৫০ টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে কয়েকদিন আগে এই একই ডিম ৬০ টাকা হালিরও বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল।
এদিকে ২০১৭ সালের মতো এ বছর দিবসটিতে কম দামে ডিম বিক্রির আয়োজন নেই। তবে দিবসটি উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনা সভায় ডিমের উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত নানা তথ্য আলোচনা করা ও সবার মধ্যে উপকারিতা তুলে ধরা হয়।
শুক্রবার বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
মন্ত্রী বলেন, ‘একটা সময় আমরা সবাই নিয়মিত ডিম খেতে পেতাম না। পোল্ট্রি উৎপাদনের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তারা নিজেদের উদ্যোগেই কিন্তু এগিয়ে এসেছেন। তারা যেভাবে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন এটা আমাদেরকে জাতিগতভাবে সহায়তা করেছে, অর্থনীতি সমৃদ্ধ করেছে। আমাদের প্রাণিজ পুষ্টি ও আমিষের যে চাহিদা সেটাও তারা দিচ্ছেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াচ্ছেন। খাবারের চাহিদার বড় একটা অংশ হিসেবে কাজ করছেন। পোল্ট্রি ফার্মের সঙ্গে যারা জড়িত সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দেশটা আমাদের সবার। আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে আজ এই পর্যায়ে পৌঁছেছি।’
এসময় নিয়মিত বাজার তদারকি করলে ডিমের দাম কমে আসবে বলে মনে করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। মন্ত্রী বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষ যেদিন অ্যাকশনে গেল সেদিন কতগুলো স্টলে গিয়ে কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক কিছুই পেয়েছেন। তার পরপরই কিন্তু হঠাৎ ডিমের দাম কমে গেল। বাজার নজরদারিতে যারা আছেন, তারা নিয়মিত তদারকি করলে ডিমের দাম কমে আসবে।’
‘বাজার ব্যবস্থাপনায় যারা জড়িত তাদের সঙ্গে একাকার করে যদি পোল্ট্রি বা ডিম উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত যারা তাদেরকে আমরা অভিযুক্ত করি তাহলে আমার মনে হয় বিষয়টা একটু নির্দয় আচরণ হয়ে যায়’ বলেন মন্ত্রী।
কী ঘটেছিল ২০১৭ সালের ডিম দিবসে:
২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর ছিল বিশ্ব ডিম দিবস। বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে সেদিন রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে তিন টাকায় ডিম বিক্রির কথা ছিল।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ডিম বিক্রির এ আয়োজন করে। ডিম কিনতে সকাল ৮টার মধ্যে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ পরিণত হয় জনসমুদ্রে। ৯টার দিকে ক্রেতাদের লাইন বিজয় সরণি পার হয়ে যায়। প্রতিজন ক্রেতাকে সর্বোচ্চ ৯০টি করে ডিম দেওয়ার কথা ছিল। মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি দেখে আয়োজকদের পক্ষ থেকে প্যাকেট করা হয় ২০টি করে ডিম। পরে সেই ডিমও আর বিক্রি করা যায়নি। তিন টাকার ডিম নিয়ে কাড়াকাড়ি মারামারির ঘটনা ঘটে।
আয়োজকদের ধারণায় ছিল না ডিম সংগ্রহ করতে সেখানে ভোর ৬টা থেকে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম হবে। বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঘোষণার পর সকালে কেউ বালতি, কেউ ডিমের খাঁচি, কেউবা কাগজের কার্টন নিয়ে খামারবাড়িতে হাজির হন। কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখে সকাল ৯টা থেকে ডিম বিক্রি শুরু করেন আয়োজকরা। তবে ধাক্কাধাক্কি আর প্রচন্ড ভিড়ে মাত্র তিনজন ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। উপস্থিত মানুষের হুড়োহুড়িতে ভেঙে পড়ে ডিম বিতরণের জন্য নির্মাণ করা অস্থায়ী মঞ্চ। এতে কয়েক খাঁচি ডিম ভেঙে যায়। ডিম নিয়ে কাড়াকাড়ি মারামারিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কর্তৃপক্ষ বিক্রি বন্ধ করে দিয়ে পুলিশ ডাকে। পরে পুলিশ এসে সাধারণ মানুষকে ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
পরে ডিম না পেয়ে সকাল ৯টা থেকে উপস্থিত সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যান। কিছুক্ষণ পরপরই শোরগোল সৃষ্টি হচ্ছিল। স্বেচ্ছাসেবীরা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন। পরে তেজগাঁও থানার পুলিশ এসে উপস্থিত জনতাকে ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর মধ্যেও বিক্ষুব্ধ মানুষ ‘আর কোনো দাবি নাই, ডিম চাই, বিচার চাই’, ‘ডিম চোর, ডিম চোর’, ‘ডিম চাই ডিম চাই’- স্লোগান দিতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনের সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে ট্রাফিক পুলিশ। ক্রেতাদের গাড়ির দীর্ঘ লাইনও ওই সড়কে দেখা যায়।