এক রাতে ‘ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে’ দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শনিবার (৮ অক্টোবর) রাত ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত এবং রাত ৩টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খৈতলা সীমান্তে এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয় বলে দাবি স্থানীয়দের।
রাত ৩টার দিকে সদর উপজেলার খৈতলা সীমান্তের মেইন পিলার ৯’র কাছে বিএসএফের গুলিতে মো. আবু হাসান (২৭) নামে এক বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় খুলনায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
নিহত মো. আবু হাসান সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কুশখালি গ্রামের মক্তব মোড়ের মো. হায়দার আলীর ছেলে।
নিহতের বাবা কুশখালি গ্রামের হায়দার আলী বলেন, শনিবার রাত ১০টার দিকে আমার কাছে কিছু টাকা চায় আবু হাসান। টাকা নেই জানালে সে পার্শ্ববর্তী বাজারে চায়ের দোকানে যাচ্ছে বলে চলে যায়। এরপর রাতে সে আর বাড়ি ফেরেনি। খৈতলা সীমান্তের শূন্য রেখায় ভারতীয় দুবলী ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা হাসানকে গুলি করে ফেলে রেখে গেছে বলে রোববার ভোর ৫টার দিকে মোবাইল ফোনে খবর পাই। স্থানীয়রা হাসানকে উদ্ধার করে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়ার পথে ডুমুরিয়া নামক স্থানে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে হাসানের মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য খুলনা সার্জিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে নিহত হাসানের শ্বশুর সদর উপজেলার ঘোনা মোল্যাপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, আবু হাসান ভারতীয় চোরাই পণ্য আনা নেওয়ার জন্য পাসিং ম্যান হিসেব কাজ করতেন। তার নামে পাঁচটি মাদকের মামলাও রয়েছে। এক সপ্তাহ আগে তাকে পুলিশ ধরার পর ছেড়েও দেয়। শনিবার রাতে হাসান ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে আনতে খৈতলা সীমান্তে অবস্থান করছিলেন। এসময় ভারতের দুবলী ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাকে গুলি করে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আশরাফুল ইসলাম জানান, হাসানের পেটের ডান দিকে গুলি লেগেছিলো।
বিজিবির সাতক্ষীরা ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আল মাহমুদ জানান, সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসানের মৃত্যুর ব্যাপারে বিএসএফের কাছে জানতে চাইলে তারা অস্বীকার করেছে। তবে এ ঘটনায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে একটি পতাকা বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। পতাকা বৈঠক কালিয়ানি সীমান্তের শূন্য রেখায় অনুষ্ঠিত হবে।
চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্তের ছোটবলদিয়ায় ‘ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে’ মোনতাজ আলী (৪০) নামে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মোনতাজ দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা ছোট বলদিয়া গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে।
স্থানীয় পারকৃষ্টপুর-মদনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম জাকারিয়া জানান, শনিবার রাতে মোনতাজসহ ৫-৬ জন বাংলাদেশি মহিষ আনতে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। রাত দেড়টার দিকে তারা মহিষ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিলেন। সে সময় সীমান্তের ৮৩নং মেইন পিলারের কাছে ভারতের মোকামতলা বিএসএফের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে মোনতাজ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অন্যরা পালিয়ে আসেন। রোরবার সকাল ১০টায় নিহতের লাশ বিএসএফ সদস্যরা উদ্ধার করে নিয়ে গেছেন।
চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির অধিনায়ক শাহ মোহাম্মদ ইশতিয়াক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।