সাইফুল ইসলাম মুকুল,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,রংপুর: রংপুর নগরীর একটি হোটেলের সামনে নোটিশ বোর্ডে লেখা ‘এই হোটেলে খাওয়া নিষেধ সুইপারের’। এমন নোটিশ ঝুলানোতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হরিজন সম্প্রদায়ের নেতারা। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগি।লিখিত অভিযোগে সুত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কাচারী বাজার এলাকার বাসিন্দা নবম শ্রেণির ছাত্র জীবন বাসফোর মৌবন হোটেলে নাশতা খেতে যায়।
এ সময় হোটেলের ম্যানেজারসহ কয়েকজন কর্মচারী জীবনকে হোটেল থেকে ধাক্কা মেরে বের করে দেন।সেই সঙ্গে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকদের এই হোটেলে খাওয়া নিষেধ আছে বলে জীবনকে গালাগাল করেন। এ ঘটনার পরপরই হোটেলের দায়িত্বরত ম্যানেজার আতিকুল ইসলাম হোটেলের প্যাডে ‘এই হোটেলে খাওয়া নিষেধ সুইপারের’ লিখে সই দিয়ে নোটিশ বোর্ডে ঝুলিয়ে দেন এবং একটি এরকমই লেখা ভুক্তভোগি জীবনের হাতে ধরিয়ে দেন।এ ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগি জীবন। হরিজন সম্প্রদায়ের নেতা সুরেশ বলেন, ‘হরিজনদের কেউ নোংরা অবস্থায় যদি হোটেলে খেতে চায়, তাদের বাধা দিতে পারে। কিন্তু নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি ছেলে পরিষ্কার অবস্থায় হোটেলে খেতে গিয়েছিল। তাকে গালাগাল করে ধাক্কা মেরে বের করে দিয়েছে।’ যা সভ্য সমাজের মানুষের কাছে কাম্য নয়।
আমরা বিষয়টিতে খুব কষ্ট পেয়েছি।যেখানে আমাদের সংবিধান সব মানুষের সমান অধিকারের কথা বলেছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ দেশের সংবিধান তথা আইন লঙ্ঘন করেছে। সেই সঙ্গে হোটেলের প্যাডে আমাদের ‘সুইপার’ বলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা আইন লঙ্ঘনকারীদের বিচার চাই।শারদীয় দুর্গা উৎসবের মধ্যে যদি ন্যায় বিচার না পাই, তবে পূজার পর আমরা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব।এ ব্যাপারে মৌবন হোটেলের সুপারভাইজার আতিকুল ইসলাম বলেন,আমি আমাদের প্যাডে যে লিখে দিয়েছি তার কারণ হলো, তারা এসে হোটেলের ভিতরের টেবিল-চেয়ারে বসে খেতে চায়।
\যার কারণে এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন,‘হোটেল কর্মচারীদের সঙ্গে তাদের একটি ছেলের কথা কাটাকাটি হয়েছে। পরে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে।মানবধিকার সংগঠক ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, হরিজনরাও তো মানুষ। মানুষ হিসেবে তাদেরও অধিকার আছে। তবে তারা যাতে সামাজিকভাবে হোটেলে খাওয়ার স্বীকৃতি পায় সেটির ব্যবস্থা করা উচিত বলে আমি মনে করি।’ এজন্য আমাদের আরো উদার হওয়া দরকার।রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক এডভোকেট আতিকুল আলম কল্লোল বলেন, ১ঘটনাটি অত্যন্ত লজ্জা জনক।
এ ঘটনায় অবশ্যই মানবাধিকার লংঘন করা হয়েছে। কেননা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রের সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।সংবিধানের ২৮ (৩) ধারায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না।
এদিকে এ ঘটনায় বিকেলে রংপুর নগরীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছে হরিজন সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। তারা দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান।রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) হোসেন আলী জানান, এরকম একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একজন ভুক্তভোগি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।