বিএনপি নেতারা চিন্তা-চেতনায় ও ধ্যান-ধারণায় পাকিস্তানি আদর্শের অনুসারী এবং দেশটির ভাবধারায় বিশ্বাসী মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, তারা সব রাজাকারের বংশধর।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার শুরুতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সম্প্রতি একটি বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে হানিফ বলেন, ‘কয়েকদিন আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেব বললেন, বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থা নাকি পাকিস্তান আমলেই ভাল ছিল। এ কথার মধ্য দিয়ে তিনি যে পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসী, ভাবধারায় বিশ্বাসী এটা প্রমাণ করলেন। তারা যে সব রাজাকারের বংশধর, তা তাদের কথা-বার্তাতেই প্রমাণ করেছেন।’
‘এরা এখনও আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাস করে না। এরা এখনও দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে খুশি হবে পারে না। তারা চায়, বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হোক। কারণ তাদের চিন্তা-চেতনা ধ্যান-ধারণায় পাকিস্তান প্রিয় দেশ। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা থেকে শুরু করে এখনও যারা নেতৃত্বে আছে তাদের অধিকাংশ পাকিস্তানী আদর্শের অনুসারী। পাকিস্তানের ভাবধারায় বিশ্বাসী’- বলেন তিনি।
বিএনপি জামাতের অপশক্তি দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে তৎপর উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিল। বিএনপি নামক দলটি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, সংবিধানও মানে না।
হানিফ বলেন, নারায়ণগঞ্জে দেখলাম বিএনপির র্যালিতে লাঠি, লোহার রড। এগুলো কি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালির উপাদান? বিএনপি-জামায়াত নতুন করে রাজপথে নেমেছে। সভা-সমাবেশের নামে তাণ্ডব চালাচ্ছে। তারা উস্কানি দিচ্ছে, পায়ে পা দিয়ে গণ্ডগোল করার চেষ্টা করছে। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ তাদের ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়ে যায়নি।
গোলযোগ সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করাই বিএনপির লক্ষ্য মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বিএনপি যেকোনও মূল্যে সরকারের পতন ঘটাতে চায়। তারা বলে নির্বাচনে যাবে না। কারণ তারা জানে, তাদের দলের দুই শীর্ষ নেতা দুর্নীতি, সন্ত্রাসী ও হত্যার দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত। জনগণ তাদের ভোট দেবে না। এটা বিএনপিও জানে।
তিনি বলেন, বিএনপির লক্ষ্য সরকারের পতন ঘটানো। তাদের ধারণা, এমনটি করতে পারলেই অন্য কোনও সামরিক সরকার এসে সব দণ্ড মওকুফ করে নির্বাচন করার সুযোগ দেবে। কিন্তু বাংলাদেশে এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের কোনও সুযোগ নেই।
সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে হানিফ বলেন, ‘আমরা আশা করি, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে। তারপরও যদি কোনও দল অংশ না নেয়, তাহলে সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাই।’
আগামী নির্বাচন অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে জানিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে দায়িত্বশীলদের প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
‘আমাদের সংগঠনকে যদি শক্তিশালী করা না যায়, তাহলে অন্যের ওপর নির্ভর করে আমরা নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবো না। জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে যে কোনও সংকটে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করে নির্বাচনে জয়লাভ নিশ্চিত করতে পারি।’
তিনি বলেন, এদেশের মানুষের আস্থা শেখ হাসিনার ওপর আছে। বিশ্ব নেতারা বঙ্গবন্ধু কন্যার ওপর আস্থা রাখেন। বিশ্বে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে যেভাবে মূল্যায়ন করে এরকম কাউকে আর কখনও করেনি।
হানিফ বলেন, করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে। নেদারল্যান্ডসে ৩০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে ২০-৩০ শতাংশ দাম বেড়েছে। বাংলাদেশ এ বিশ্বব্যবস্থার বাইরে নয় বলেই কিছু জিনিসের দাম বেড়েছে। এছাড়া কিছু ব্যবসায়ীর অসৎ মানসিকতার কারণে কিছু জিনিসের দাম অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়েছে। তবে সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতি অস্বস্তিকর অবস্থায় নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশের অর্থনীতি গতিশীল রেখে কাজ করে যাচ্ছেন।
সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব ইল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামসহ কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের আমন্ত্রিত নেতারা