শ্বাসকষ্ট নিয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন মাত্র ৩২ বছর বয়সী ফেনীর মাকসুদুর রহমান টুটুল। চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতাল ও ম্যাক্স হাসপাতালসহ একাধিক হাসপাতাল ঘুরেও মাকসুদুরকে ভর্তি করানো যায়নি। আইসিইউ খালি না থাকার অজুহাতে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে সব হাসপাতাল থেকে।
আশঙ্কাজনক অবস্থায়ই তাকে নিয়ে নামি-দামি ৬টি হাসপাতাল ঘুরতে ঘুরতে রাস্তায়ই কেটে গেছে স্বজনদের ৪ ঘণ্টার বেশি। ফেনীর ছাগলনাইয়ার শুভপুর ইউনিয়নের চম্পকনগর গ্রামের আবু তাহের চৌধুরীর বড় ছেলে মাকসুদুরকে রোববার রাত ১০টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
কথা হয় মৃত মাকসুদুর রহমানের ছোট ভাই মিটুল চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি অ্যাম্বুলেন্সে তার ভাইয়ের সঙ্গে ছিলেন। প্রচুর শ্বাসকষ্ট নিয়ে বড় ভাইকে ভর্তি করানোর জন্য হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ছুটে বেড়ানোর তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে মিটুল বলেন, ‘রোববার দুপুরের দিকে ভাইয়ের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে প্রথমে নিয়ে যাই চট্টগ্রামের রয়েল হাসপাতালে।
সেখানে জরুরি বিভাগের ডাক্তার তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন মেপে জানালেন, টুটুলের আইসিইউ দরকার। তবে রয়েল হাসপাতাল জানিয়ে দেয় তাদের কোনো আইসিইউ খালি নেই। এর পর ৪ ঘণ্টা ধরে একে একে মা ও শিশু হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতাল, সিএসসিআর ও ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে পাগলের মতো ছুটলেও কোথাও আইসিইউ পাওয়া যায়নি, ফলে ভর্তিও করানো যায়নি। রয়েল হাসপাতালে অক্সিমিটারে অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপা ছাড়া আর কোনো চিকিৎসাই পাননি ভাই আমার।
দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা ধরে অ্যাম্বুলেন্সে ভাইয়ের মৃত্যু যন্ত্রণার কথা স্মরণ করে মিটুল চৌধুরী বলেন, ‘দ্রুতই ভাইয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত অনেকটা নিরুপায় হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে শুরুর দিকে আমরা চমেক হাসপাতালে যোগাযোগ করলে বলা হয়, সেখানে কোনো আইসিইউ খালি নেই। আমাদেরকে আরও বলা হয় যে, কোনো রোগীই তারা ভর্তি নেবে না, তাদের আইসিইউ নেই, চিকিৎসকও নেই। নানা অজুহাত দেখিয়ে কেউই আমার ভাইকে ভর্তি নেয়নি।’ তিনি বলেন, ‘যেখানে গেছি সেখানেই শুধু অজুহাত। শেষ পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই আমার ভাই মারা যান।’
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর আশরাফুল করিম বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য আমাদের মাত্র চারটি আইসিইউ বেড রয়েছে। চারটিতেই রোগী ভর্তি আছেন। কাউকে নামিয়ে দিয়ে তো অন্য কাউকে নেয়া যায় না। এ কারণে সেরকম নতুন কোনো রোগী এলে ভর্তি নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মৃত মাকসুদুর রহমানের ছোট ভাই মিটুল বলেন, ‘আমার ভাই আমাদের চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় মারা গেল কিছুই করতে পারলাম না। এই শহরের এত এত হাসপাতাল, চিকিৎসক যদি আমাদের কোনো কাজেই না আসে, এগুলো রেখে লাভ কী?’
তিনি বলেন, ‘সরকারিভাবে বলা হচ্ছিল চট্টগ্রামে অনেক সিট খালি। অনেক আইসিইউ খালি। এর মধ্যে আজ আমার ভাই বিনা চিকিৎসায় মারা গেল। আমরা ৪ ঘণ্টা ধরে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ছুটেছি কিন্তু কোনো চিকিৎসা পেলাম না।’
রোববার রাতে লাশ নিয়ে ফেনীতে ফিরে যান পরিবারের সদস্যরা। এক কন্যা সন্তানের জনক মাকসুদুর রহমানের স্ত্রী ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সোমবার সকালে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।