বিশাল মরুভূমিতে কমপক্ষে ৩টি গ্রুপে শতাধিক বাংলাদেশি থাকার প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে ত্রিপলিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। যারা ইতালি যেতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
[৩] রাষ্ট্রদূত শেখ সিকান্দার আলী বলছেন, যুদ্ধকবলিত লিবিয়া মানবপাচারের তুলনামূলক নিরাপদ রুট হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বহু দিন ধরে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এবং স্থানীয় সূত্রে বিভিন্ন সময় বিভিন্নরকম তথ্য পাওয়া যায়। দূতাবাস তা যাচাই করে। ওই তথ্য কোন একটি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তথ্যটা খতিয়ে দেখছি, তবে এখনও নিশ্চিত বা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি অন্য একটি অফিস্যিয়াল কাজে ত্রিপলির বাইরে আছি, স্টেশনে ফিরলে এ বিষয়ে হয়তো আরও কিছু তথ্য দিতে পারবো।
[৫] স্মাগলিং ওয়্যার হাউজে বন্দি কিছু বাংলাদেশির ছবিও দূতাবাস কর্মকর্তাদের হস্তগত হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রাপ্ত তথ্য এবং ছবিগুলোর মিল-অমিল খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লোকেশনও মিলিয়ে নেয়ার কাজ চলছে। সেখানে সুনির্দিষ্টভাবে কত বাংলাদেশি রয়েছে তার তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। [৬] উদ্ধার করা না গেলে এদের বেশিরভাগেই হয় মরুভূমিতে না হয় সাগরে সমাধি হবে, এমন আশঙ্কা করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, চেষ্টা চলছে তাদের লোকেশন ট্রেস করার। এটি করা গেলে হয়তো উদ্ধারও করা যাবে।
[৭] একাধিক কূটনৈতিক সূত্র এবং ঢাকার দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা বলেন, প্রাণহানীর আশঙ্কার কথা জেনেও বাংলাদেশিরা বিপদসংকুল লিবিয়ার পথে পা বাড়ান কেবলই ইউরাপ যাওয়ার নেশায়। পালের মো প্রটোকলে মতে এমন কর্ম হিউম্যান ট্রাফিকিং নয় বরং স্মাগলিং। স্মাগলাররা একজন বাংলাদেশিকে লিবিয়া পৌঁছাতে কমপক্ষে ৪ বার হাত বদল করে। এবং পুরো কাজটি হয় জঙ্গী স্টাইল বা কাট-আউট সিস্টেমে। অর্থাৎ খুব কম সময়ই এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের তথ্য জানে। এটাকে অনেকে রিমোট-কন্ট্রোল সিস্টেমও বলে থাকেন। সূত্র মতে, ওই ট্রাফিকিং হয় স্বেচ্ছায় অর্থাৎ প্রলোভন দেখিয়ে একজনকে রাজী করানো হয়। সেও মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে এ পথে যায়। এদের প্রলোভন দেখিয়ে রাজী করানোর জন্য গ্রামেগঞ্জে কমিশনে দালালরা কাজ করে। [৮] ঠিক একইভাবে লিবিয়াতেও দালালরা থাকে খালাসি কাজে। অর্থাৎ মরুভূমি পার করা বা ভূমধ্যসাগরে নৌকায় তোলা, এটাই তাদের কাজ। মাঝে মধ্যে ধরপাকড়ে গ্রামের এবং লিবিয়ার প্রান্তিক দালালরা আটক বা শাস্তির শিকার হলেও বনানী, বারিধারা, দূবাই কিংবা ইস্তাম্বুলে আলিশান অফিস নিয়ে থাকা ভদ্রবেশী স্মাগলারা থাকেন অধরা।
[৯] গত কয়েক বছরে পাচারকারীরা নতুন এক পদ্ধতি চালু করেছে। এ পদ্ধতিতে ইউরোপ যেতে আগ্রহী বাংলাদেশীদের শুধু দেহটি থাকলেই যথেষ্ট বলে মনে করে পাচারকারীরা। কয়েকটি পথ ধরে লিবিয়া হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করে বাংলাদেশীরা। এর প্রথমটি হলো ঢাকা টু লিবিয়া ভায়া দুবাই। দ্বিতীয়টি হলো ঢাকা থেকে তুরস্ক হয়ে ইউরোপ প্রবেশের চেষ্টা, ব্যর্থ হলে লিবিয়া। তৃতীয়টি ঢাকা টু দক্ষিণ সুদান, এরপর মরুভূমি হয়ে লিবিয়া। মানবজমিন