যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে গত সপ্তাহে একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার হাঁটুর চাপে জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে টালমাটাল ট্রাম্প প্রশাসন।
১৯৮৮ সালে মার্টিন লুথার কিংয়ের হত্যাকাণ্ডের পর এত বড় সহিংস বিক্ষোভ আমেরিকাতে আর হয়নি।
চল্লিশটির মতো বড় বড় শহরে সন্ধ্যার পর থেকে কারফিউ চলছে। বাইশটি অঙ্গরাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় রিজার্ভ সেনা ইউনিটের ১৭ হাজারেরও বেশি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউজের কাছে শুক্রবার থেকে বিক্ষোভের মাত্রা যেভাবে বাড়তে থাকে, তাতে উদ্বিগ্ন দেহরক্ষীরা কিছুক্ষণের জন্য ট্রাম্পকে মাটির নিচে একটি বাঙ্কারে নিয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু এ সংকটের মধ্যেই গত এক সপ্তাহ ধরে ট্রাম্প যেসব টুইট করছেন। এবং বিশেষ করে সোমবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউজে যে ভাষণ তিনি দিয়েছেন, তাতে অধিকাংশ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিশ্চিত যে বর্ণবাদ বিরোধী এই বিক্ষোভকে ট্রাম্প নভেম্বরের আগামী নির্বাচনে জেতার প্রধান হাতিয়ার করতে চাইছেন।
হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত শহর এবং গভর্নরদের একহাত নিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ার করেছেন, তারা যদি ‘সাধারণ মানুষের জানমাল এবং সম্পদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে তিনি সেনা মোতায়েন করে নিজেই ‘তাদের হয়ে সমস্যার সমাধান করে দেবেন।
কয়েকশ বছরের পুরনো যে আইনের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট সেনা মোতায়েনের কথা বলছেন, তার জন্য গভর্নরদের কাছ থেকে অনুরোধ আসতে হবে এবং পার্লামেন্টের অনুমোদন নিতে হবে।
শেষবার এই আইন কার্যকর করে সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল ১৯৯২ সালে লস এঞ্জেলসে পুলিশের বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিক্ষোভ থামাতে।
কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, সেনা মোতায়েন করতে পারুক আর নাই পারুক মি. ট্রাম্প দেখাতে চাইছেন ডেমোক্র্যটরা অথর্ব, তারা মানুষের জানমাল রক্ষা করতে পারেনা, ফলে তিনিই একমাত্র ত্রাতা, তার কোনো বিকল্প নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক এবং গবেষণা সংস্থা আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো ড. আলী রিয়াজ বলছেন, সোমবার হোয়াইট হাউজের লনে তার বিবৃতির প্রধান টার্গেট ছিল ভোটাররা।
ওয়াশিংটন থেকে বিবিসির প্রতিবেদক অ্যান্থনি জারকারও বলছেন, বিক্ষোভ শুরুর সাতদিন পর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ অসন্তোষের মূল কারণ বা পুলিশের সংস্কার নিয়ে টুঁ শব্দও করেননি। তিনি নিজেকে এমন একজন প্রেসিডেন্ট হিসাবে তুলে ধরেছেন যিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাণ্ডারি।