Breaking News

হঠাৎ আরবরা কেন ভারতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন ?

গত কয়েক সপ্তাহে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), কুয়েত সরকার, সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক প্রিন্সেস এবং সেইসাথে বেশ কয়েকজন আরব অ্যাক্টিভিস্ট করোনাভাইরাস বিস্তারের জন্য ভারতীয় মুসলিমদের দায়ী করাকে ভারতীয়দের ইসলামফোবিক বিদ্বেষমূলক প্রচারণা হিসেবে অভিহিত করেছেন।

উপসাগরীয় এলাকার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল সংখ্যক টুইট ও বিবৃতি প্রদান করে সামাজিক মাধ্যমের পোস্টের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ (তিনি টুইটারে বলেছেন যে কোভিড-১৯ কোনো বর্ণ বা ধর্মকে দেখে না) ভারত সরকার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে বাধ্য হয়।মার্চে দিল্লিতে তাবলিগি জামাতের একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী কয়েকজনের মধ্যে করোনাভাইরাস ধরা পড়ার পর ভাইরাসটি বিস্তারে ষড়যন্ত্র করার জন্য ভারতীয় মুসলিমদের অভিযুক্ত করার মধ্য দিয়ে এর শুরু। #CoronaJihad -এর মতো হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড হয়, টেলিভিশন বিতর্কে একে মানববোমা হিসেবে অভিহিত করা হয়। অনেকে তাবলিগকে নিষিদ্ধ করারও আহ্বান জানান। সংগঠনটির নয়া দিল্লি অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়।

গত ১৯ এপ্রিল ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ওই দিন পর্যন্ত ১৫ হাজার শনাক্ত লোকের মধ্যে চার হাজারের বেশি তাবলিগি জামাতের লোক। সংগঠনটির প্রধান সাদ কান্ধলভির বিরদ্ধে ‘নরহত্যার চেষ্টা’ ও অর্থ পাচারের মামলা করা হয়। তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে।
বৃহস্পতিবার ভারতে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজারের বেশি এবং এতে মারা গেছে এক হাজারের বেশি।

বিদ্বেষমূলক পোস্ট

তাবলিগ ইস্যুর পর ডানপন্থী হিন্দুরা সামাজিক মাধ্যমে ইসলামফোবিক পোস্টের বন্যা বইয়ে দেয়। এসব পোস্টের অনেকগুলো দেয় উপসাগরীয় দেশগুলোতে বসবাসকারীরা।দুবাইভিত্তিক ভারতীয় সৌরভ উপাধ্যায় ‘তারাই যে মহামারীটির উৎস তা স্বীকার করে নেয়ার জন্য’ মুসলিমদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি তাবলিগ সদস্যদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন তারা সন্ত্রাসী। তবে উপসাগরীয় ও ভারতের অনেক সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে তিনি তার টুইটগুলো সরিয়ে ফেলেন।

মোদির বিজেপির তরুণ এমপি তেজস্বী সূর্যের একটি পুরনো টুইটও সামনে চলে আসে। এতেও আরো ক্ষোভের সঞ্চার হয়।সূর্য ২০১৫ সালে এক কানাডিয়ান-পাকিস্তানি লেখকের উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করেন যে গত কয়েক শ’ বছর ধরে আরব নারীরা কখনো অর্গ্যাজমের স্বাদ পায়নি।
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. ফারহান মুজাহিদ চক বলেন, হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের অহংকারের মাত্রা বিশ্বজুড়ে লোকজনকে কষ্ট দিচ্ছে, আগের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিচ্ছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্সেস হেন্দ আল-কাসিমি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, উপসাগরে প্রকাশ্যে বর্ণবাদী ও বৈষম্যমূলক আচরণকারী ভারতীয়দের জরিমানা করা হবে, দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।গত মাসে উপসাগরীয় অঞ্চলে কর্মরত অন্তত ছয় হিন্দু সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেয়ার কারণে চাকরি হারিয়েছেন বা অভিযুক্ত হয়েছেন।উপসাগরীয় দেশগুলোতে প্রায় ৮৫ লাখ ভারতীয় বাস ও চাকরি করে, তাদের একটি বড় অংশ হিন্দু।

জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর (বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত) সাথে ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খুবই ভালো হয়েছে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।কুয়েতভিত্তিক অ্যাক্টিভিস্ট আবদুর রহমান নাসর টুইটে বলেন, প্রতিবছর উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে ৫৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ভারতে হস্তান্তরিত হয় এবং বছরে সব মুসলিম দেশ থেকে ১২০ বিলিয়ন ডলার যায় ভারতে। এসব দেশে ভারতীয়দের (প্রধানত হিন্দু) সাথে ভালো আচরণ করা হয়।

তিনি বলেন, এর বিনিময়ে তারা ভারতে মুসলিমদের সাথে কেমন আচরণ করছে?
কুয়েতের নাগরিক, আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপ মেজবেল আল-শারিকা টুইটে বলেন, তিনি জেনেভাস্থ জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ভারতীয় মুসলিমদের জন্য বিনা পয়সায় লড়বেন।

কূটনৈতিক উত্তেজনা

গত সোমবার আরব বিশ্বে উত্তেজনা বাড়ার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কুয়েত ভারতীয় মুসলিমদের প্রতি আচরণ নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করে এবং হস্তক্ষেপ করার জন্য ওআইসির প্রতি আহ্বান জানায়।কুয়েত মন্ত্রিসভার সচিবালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে এবং তাদের অধিকার লঙ্ঘন করছে, তারা কি মনে করছে যে বিশ্বের মুসলিমরা এসব অপরাধের বিরুদ্ধে নীরব থাকবে এবং তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে ও আইনগতভাবে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না?

এর আগে ১৮ এপ্রিল ওআইসি এক বিবৃতিতে ভারতে ইসলামফোবিয়ার ক্রমবর্ধমান স্রোত বন্ধ করতে জরুরিভিত্তিকে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নয়া দিল্লির প্রতি আহ্বান জানায়।

বিশেষ উদ্বেগের দেশ

ভারতে ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার খ্যাতিমান কণ্ঠ প্রিন্সেস আল-কাসেমি গত সপ্তাহে গালফ নিউজে এক কলামে বলেন, বিশ্বের আরেকটি হিটলারের প্রয়োজন নেই, বরং বিশ্বের প্রয়োজন মার্টিন লুথার, নেলসন ম্যান্ডেলা বা গান্ধীর মতো নায়ক।
তিনি লিখেন, তোমার ভাইকে হত্যা করা তোমাকে নায়ক বানাবে না, এমন কাজ তোমাকে স্বৈরাচার বানাবে, খুনিতে পরিণত করবে। একটি ছোট ও মৃদু আন্দোলন শুরু হয়েছে, এটি আরববিশ্বজুড়ে প্রতিধ্বনিত হবে।

কাতারের দোহা ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড হিউমেনিটেরিয়ান স্টাডিজের পরিচালক সুলতান বারাকাত করোনাভাইরাস মহামারীর জন্য ভারতীয় মুসলিমদের দায়ী করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে জানান।তিনি বলেন, আরব বিশ্বে যুগের পর যুগ ধরে লাখ লাখ ভারতীয় বাস করছে। তারা কখনো বৈষম্যের শিকার হয়নি। আবার উপসাগরীয় এলাকায় বাস করে কাজ করছে, এমন লোকের ইসলামফোবিক মন্তব্য আরো বেশি কষ্টদায়ক।

আরও পড়ুনঃ মোদির ভারতের করোনাভাইরাসের সাম্প্রদায়িক রঙ

অবশ্য বিজেপির মুখপাত্র জিভিএল নরসীমা রাও আলজাজিরাকে বলেন, এই ইস্যু আরব দেশগুলোর সাথে ভারতের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। কারণ এটি প্রপাগান্ডার অংশ, আসল নয়। তিনি বলেন, এগুলো হলো বৈরী লোকদের ভারতবিরোধী ও হিন্দুবিরোধী প্রপাগান্ডা।

রাওয়ের আশাবাদ দৃশ্যত ক্ষণস্থায়ীই হয়েছে।

মঙ্গলবার ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম ধর্মীয় স্বাধীনতার মারাত্মক লঙ্ঘনের জন্য বিশেষ উদ্বেগজনক দেশ হিসেবে ভারতকে চিহ্নিত করার জন্য পররাষ্ট্র দফতরের প্রতি আহ্বান জানায়।ভারত যদিও মার্কিন প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে একে পক্ষপাতপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করেছে, কিন্তু তবুও তা ভারতের মুসলিমদের টার্গেট করা নিয়ে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক উদ্বেগ অগ্রাহ্য করা দেশটির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের জন্য কঠিন করে তুলবে।

Check Also

জুলুম থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তে বলেছেন

মহানবী (সা.) যেকোনো ধরনের জুলুম থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *