Breaking News

ধর্ষণ মামলায় জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে বাদীকে খুন করে সিদ্দিক

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায় ইউপি সদস্য মামুন হাওলাদারকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামি সিদ্দিকুরকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

২০১১ সালে নিহত মামুনের আত্মীয়া জনৈক এক নারীকে ধর্ষণ করায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এতে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটায় প্রতিশোধ নিতে ইউপি সদস্য মামুনকে হত্যা করে সিদ্দিক।

শুক্রবার দিনগত রাতে র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জ সদর থানা এলাকা থেকে মামুন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামি গাজী সিদ্দিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।

শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, গত ৩১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পিরোজপুরের কাউখালীর শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মামুন হাওলাদারকে প্রকাশ্য দিবালকে কতিপয় দুষ্কৃতকারী কুপিয়ে বাম পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে, শরীর ও মুখমণ্ডল ক্ষত-বিক্ষত ও বিকৃত করে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে সিদ্দিকুর রহমানকে প্রধান আসামি করে তার সহযোগী আরও ১০ জন এবং অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে ভান্ডারিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
গ্রেপ্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব মুখপাত্র জানান, নিহত মামুন হাওলাদার পেশায় একজন ব্যবসায়ী এবং শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার সিদ্দিকুর, তার ভাই কামাল এবং ভাতিজা আসাদুলের দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল।
র‌্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, ২০১১ সালে নিহত মামুনের আত্মীয়া জনৈক নারীকে ধর্ষণ করার দায়ে গ্রেপ্তার সিদ্দিকুরের ভাই কামাল এবং ভাতিজা আসাদুলের বিরুদ্ধে নিহত মামুন বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় আসামি কামাল ও আসাদুল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে তারা মামুনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে হত্যার পরিকল্পনা শুরু করেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মামুনের সঙ্গে সিদ্দিকুর ও কামালের বাকবিতণ্ডা হয়। পূর্বশত্রুতার জের ধরে গ্রেপ্তার সিদ্দিকুরের নেতৃত্বে কামাল, আসাদুল এবং তাদের আরও কয়েকজন সহযোগী মিলে মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
খন্দকার মঈন বলেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে সিদ্দিকুর, কামাল, আসাদুল এবং সজল জমাদ্দারসহ বেশ কয়েকজন মোল্লারহাট বাজারে সিদ্দিকুরের অফিসে একত্রিত হয়ে হত্যার নীলনকশা তৈরি করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, মামুনকে কৌশলে মোটরসাইকেলে করে উত্তর ভিটাবাড়িয়ার একটি স্থানে নিয়ে আসার দায়িত্ব দেয়া হয় সজল জমাদ্দারকে।
র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, কামাল ও আসাদুলসহ অন্যদের ধারালো অস্ত্র সংগ্রহ করে ভিটাবাড়ী এলাকায় গাছ ফেলে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশনা দেয়া হয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সজল জমাদ্দারকে পিটিয়ে আহত করার কথা বলা হয়, যেন বিষয়টি নিয়ে জনমনে কোনো সন্দেহের সৃষ্টি না হয়।
গ্রেপ্তার সিদ্দিকুর ঘটনার পরপরই গা ঢাকা দেন। প্রথমে পিরোজপুর এবং পরে রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় আত্মগোপন করেন। এরপর সে অবস্থান পরিবর্তন করে নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন এলাকায় যান।

সিদ্দিকুর এর পরিচয় দিয়ে র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, ১৯৮৪ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় এসে এক ঠিকাদারের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন সিদ্দিক। ২০০২ সালে ঠিকাদারির কাজ ছেড়ে গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে ফিরে যান এবং সেখানে মুরগির ফার্ম ও মাছের ব্যবসা শুরু করেন।
পরবর্তীতে ২০০৩ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শিয়ালকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের পর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, বিভিন্ন ধরনের বিরোধের জের ধরে তার নানাবিধ অপকর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি এবং অস্ত্র মামলাসহ প্রায় ১০টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি একাধিকবার কারাভোগও করেছেন বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

Check Also

৩ দিনে ৭৮৩ বিএনপি নেতাকর্মী গ্রেফতার

১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গণগ্রেফতার চালানো হচ্ছে বলে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *