Breaking News

”কোনও সিসিটিভি ফুটেজ নেই,কোনও প্রত্যক্ষদর্শীও পাওয়া যায়নি,একবারে ক্লু লেস মামলা”

আমার সানি দুপুরে ভাত খেয়ে যে গেলো আর তো এলো না। আমার এত বড় একটি ছেলের কী হয়েছে। ছেলে যে মরে গেছে সেটা আমার বিশ্বাস হয় না। আমার সানি ফিরে আসবে—এটাই আমার বিশ্বাস।’ কথাগুলো বলছিলেন গত ১৪ জুলাই মৈনট ঘাটে ১৫ বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে মারা যাওয়া বুয়েট শিক্ষার্থী তারিকুজ্জামান সানির মা নাছিমা বেগম।

সম্প্রতি বাংলা ট্রিবিউনের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন।

সানির মা নাছিমা বেগম বাংলা ট্রিবিউন বলেন, যারা আমার ছেলেকে ডেকে নিয়েছে তারা এখন জামিনে বেরিয়ে ঘুরছে। মা আমি হিসেবে কীভাবে তা মেনে নেই? আসামিরা একে একে সবাই জামিন পেয়ে গেলো। এভাবে চলতে থাকলে খুনিরা সাহস পেয়ে যাবে। এটা কী কখনও কারও বিশ্বাস হবে ১৬ জন লোক একসাথে গেলো মাওয়া। একজন পানিতে পড়ে গেলো আর ১৫ জন একজনকে ধরতে পারলো না? এটা কারও বিশ্বাস হবে? আমার ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে, ও পড়বে কেন? ওতো পড়ার কথা না।

গত ১৪ জুলাই বিকালে ঢাকা জেলার দোহার থানাধীন মৈনট ঘাটে ১৫ বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী তারিকুজ্জামান সানি। বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের পঞ্চম সেশনের ছাত্র সানির বাবার নাম হারুন অর রশিদ। বাড়ি রাজধানীর হাজারীবাগে। নিখোঁজ হওয়ার পর সানির সন্ধানে নামে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর থেকে আসা ডুবুরি দল। ওইদিন রাতে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে ১৫ জুলাই বেলা ১১টা ২৬ মিনিটে মৈনট ঘাট থেকে ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ১৫ জুলাই বিকালে সানির বড় ভাই হাসাদুজ্জামান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় সানির সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া অন্য ১৫ বন্ধুকে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ অক্টোবর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিশকাত শুকরানা প্রতিবেদন জমার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন ২৮ নভেম্বর। এ মামলায় গ্রেফতার ১৫ জন আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে।

মামলায় আসামিরা হলেন—শরীফুল হোসেন, শাকিল আহম্মেদ, সেজান আহম্মেদ, রুবেল, সজীব, নুরজামান, নাসির, মারুফ, আশরাফুল আলম, জাহাঙ্গীর হোসেন লিটন, নোমান, জাহিদ, এটিএম শাহরিয়ার মোমিন, মারুফুল হক মারুফ ও রোকনুজ্জামান ওরফে জিতু।

মামলার বাদী সানির ভাই মো. হাসানুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ মামলার আসামিরা সবাই সানির পরিচিত ছিল না। সানির পরিচিত ছিল শুধু দুই/তিন জন। তার মধ্যে আমরা যে বাসায় ভাড়া থাকতাম সে বাসার বাড়িওয়ালার ছেলে ছিল। ঘটনার দিন দুপুরে ভাত খেয়ে সানি বাসায় ছিল। হঠাৎ বাড়িওয়ালার ছেলে শাকিল ডেকে বলে—মাওয়া যাবে। সানি বলেছে—আমার বাইকের তেল নাই। তখন তারা বললো—আমরা তেল ভরে দিবো, চলো। তারপর সানি তাদের সাথে মাওয়া সাথে যায়।

সানির ভাই আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন তারা ৮টি বাইকে ১৬ জন ঘুরতে যায়। তারা বিভিন্ন বয়সী। হঠাৎ রাত প্রায় ১০ দিকে আমার কাছে ফোন আসে সানি মাওয়ায় পানিতে পড়ে গেছে। অথচ পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে বিকালে। এসব থেকে আমাদের সন্দেহ হয়—ভাইয়ের মৃত্যুটা হত্যা, নাকি দুর্ঘটনা। আমরা চাই সঠিক তদন্ত হোক। তদন্তে ভাইয়ের মৃত্যুর রহস্য উৎঘাটন হওয়া প্রয়োজন। আমরা এটাও চাই কোনও নিরপরাধ ব্যক্তির যেন সাজা না হয়।’

হাসানুজ্জামান আরও বলেন, ‘দুই বছর আগে বাবাকে হারিয়েছি। পরিবারে দুই ভাই ও মা ছিল। এখন তো ভাইকেও হারালাম। পরিবারের সকল স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো।’

মামলার তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা দোহার থানার কুতুবপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক জহুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ মামলাটি চাঞ্চল্যকর। গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। মূলত ঘটনার স্থানে

কোনও সিসিটিভি ফুটেজ নেই। কোনও প্রত্যক্ষদর্শীও পাওয়া যায়নি। একবারে ক্লু লেস মামলা। তারপরেও চেষ্টা করছি—ভালো একটি প্রতিবেদন দেওয়ার।’

মামলার তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য বারবার তাগিদ দিচ্ছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টটি হাতে আসলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দ্রুত আদালতে রিপোর্ট দাখিল করবো।’

Check Also

কন্যার ছিন্নভিন্ন দেহ কুড়াচ্ছিলেন মা

অনেক সাধনা। দীর্ঘ প্রতীক্ষা। সংসার পাতার আট বছর পর গিয়াস-রাবেয়া দম্পতির ঘরে জ্যোতি ছড়ায় রায়সা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *