Breaking News

মরার আগে কষ্টের কথা ডায়েরিতে লিখে গেছেন রত্না

গত রবিবার রাতে ভোলার লালমোহন উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নে বিষপানে আত্মহত্যা করেন জান্নাতুল ফেরদৌস রত্না নামে এক গৃহবধূ। ওই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মাহাবুব চৌকিদারের বাড়িতে মোবাইল ও স্বর্ণের চেন চুরির অপবাদ সইতে না পেরে তিনি এই কঠিন পদক্ষেপ নেন।

২৫ বছর বয়সী রত্না চরভূতা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. লিটনের স্ত্রী। তিনি দুই সন্তানের মা। তার মনের মধ্যে জমা ছিল অনেক কষ্ট। আত্মহত্যার আগে সেই কষ্টের কথা রত্না লিখে গেছেন একটি ডায়েরিতে। বুধবার লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

ডায়েরিতে রত্না লিখেছেন- ‘আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যাতে পরপারে ভালো থাকতে পারি। সবার মতো আমিও সুন্দর একটা জীবন নিয়ে সংসার করতে চেয়েছি। কিন্তু এ সমাজ আমাকে বেঁচে থাকতে দিলো না। মিথ্যা কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে সমাজে মুখ দেখাতে ইচ্ছা করে না। বাবা-মা, স্বামীর সম্মানের দিকে তাকিয়ে কখনো কোনো পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলি নাই, নিজের চরিত্রকে খারাপ করি নাই। কিন্তু আজ আমি চুরি না করেও চোর সবার মুখে মুখে’।

‘বাবাকে অনুরোধ আমার স্বামীকে বাদে বাকি কাউরে ছাড় দিবা না, ওরা সবাই মিথ্যাবাদী। আমার চাচাশ্বশুর ওরা সবাই নাটেরগুরু। ওরা সবাই আমার নামে মিথ্যা অপবাদ রটাইছে। আমি কতটা বিশ্বাসী আর সৎ ছিলাম, সেটা আমার আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। একটা মানুষের জীবন ছাড়া প্রিয় আর কী হতে পারে! আমি আমার জীবনের বিনিময়ে বলছি আমি চুরি করি নাই। এখন তোরা খুশি, সবাই খুশিই থাক। আমি চলে গেলাম। কেউ আর তোদের সঙ্গে সত্যের প্রতিবাদ করবে না। আর বেশি কিছু লিখলাম না। অনেক কথা বলার ছিল সমাজকে, এই সমাজে ভালো মানুষের মূল্য নাই। সবার কাছে একটা অনুরোধ রইল আমার মেয়েদেরকে দেখেন। ওদের জন্য আমার কতটা কষ্ট হয় বলে বোঝাতে পারব না। মা ছাড়া কতটা অবহেলিত সন্তান সেটা যার মা নাই সে বুঝে। বাবা-মা পারলে ওদের খেয়াল নিও, না পারলে জোর নাই।’

রত্নার বাবা আবুল কাশেম জানান, কিছুদিন আগে রত্নার চাচাশ্বশুর মো. হাফিজুর রহমান তার পরিবার নিয়ে ভারত থেকে ওই বাড়িতে বেড়াতে আসে। ভারতে তিনি বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হয়ে সন্তোষ দে নামে বসবাস করেন। তিনি নিজেদের সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার রত্নার কাছে জমা রাখেন। ওই ঘর থেকে একটি স্বর্ণের চেন ও মোবাইল ফোন চুরি হয়। এই চুরির অপবাদ চাচাশ্বশুর রত্নার ওপর দেয়।

আবুল কাশেম অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে চুরির অপবাদ দিয়ে কয়েক দিন পর্যন্ত মানসিকভাবে অত্যাচার করে তার চাচাশ্বশুর ও বাড়ির অন্যান্য স্বজনরা। অপমান সহ্য করতে না পেরে রত্না ঘরে থাকা কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করে।

নিহতের স্বামী লিটন জানান, আমার স্ত্রীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার চাচারা অনেক গালিগালাজ করেছে। তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে।

এ বিষয়ে লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুবুর রহমান জানান, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। রত্নার মরদেহ ময়নাতদন্ত করে আনা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

Check Also

কন্যার ছিন্নভিন্ন দেহ কুড়াচ্ছিলেন মা

অনেক সাধনা। দীর্ঘ প্রতীক্ষা। সংসার পাতার আট বছর পর গিয়াস-রাবেয়া দম্পতির ঘরে জ্যোতি ছড়ায় রায়সা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *