মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সন্তানদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানান বক্তারা।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে গুডস হিল ঘেরাও সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এ সময়
আইনের আওতায় আনা, যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের রাজনীতি নিষিদ্ধ, গুডস হিলকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরসহ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন তারা।
হুম্মাম কাদের চৌধুরীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিবাদে শনিবার সকালে নগরের চকবাজার থানাধীন গনি বেকারির মোড়ে অবস্থিত গুডস হিল ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড
মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ছাড়াও সমাবেশে যোগ দেন মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মী, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ সময় হুম্মাম কাদেরের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে তা রাষ্ট্রবিরোধী এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সরওয়ার আলম চৌধুরী মণি জানান, হুম্মাম কাদের যে বক্তব্য দিয়েছে তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। তাই তাকে চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হল।
উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্ত বলেন, একজন যুদ্ধাপরাধী সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সন্তান যখন হুংকার করে তখন বুঝতে হবে এর পেছনে বড় কোনো শক্তি মদদ দিচ্ছে। স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও দেশ বিরোধী শক্তির এমন আস্ফালনে কঠোর নিন্দা জানিয়ে দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান মুক্তিযোদ্ধারা।
চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের সন্তানদের রাজনীতিতে দেখতে চাই না। রাজাকারের বাড়িঘর, সম্পত্তি অবিলম্বে বাজেয়াপ্ত করা হোক। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হোক। যদি তা না হয় তবে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবো।
সমাবেশে সাকা চৌধুরীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অন্যতম সাক্ষী গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবসার বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। স্বাধীনতা এত বছর পরও রাজাকারদের সন্তানদের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হচ্ছে।
বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের লালন-পালন করছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘কুলাঙ্গার সালাহউদ্দিন কাদেরের কুলাঙ্গার সন্তান বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য রেখেছে। বিএনপি যুদ্ধাপরাধী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজনীতি করছে। এই বিএনপিকে অবিলম্বে বিলুপ্ত করার দাবি জানান তারা।
একাত্তরে গুডস হিলে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হত। তাই এটাকে রাজাকার হিল নামকরণ করে আগামী তিন মাসের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করা, যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন নেতারা।
সভাপতির বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নগর শাখার আহ্বায়ক শাহেদ মুরাদ সাকু বলেন, তিনমাসের মধ্যে কোনো ঘোষণা না পেলে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা কথা জানান তিনি।
সমাবেশ শেষে গুডস হিলের ফটকে প্রতীকী তালা ঝুলিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া দেয়ালে লিখে দেয়া হয় রাজাকারের বাড়ি। রাজাকার হিল নামে টাঙ্গানো হয় ব্যানার।
গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে বিএনপির গণসমাবেশে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে শহীদ বলে আখ্যা দেন তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। সমাবেশে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ওই সদস্য বলেন, ক্ষমতা ছাড়ার পর একা বাড়ি ফিরতে পারবেন না। সব শহীদের কবরে গিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হবে। সবশেষ তিনি ‘নারায়ে তাকবীর’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন। যেটি স্লোগান বিএনপি দলীয়ভাবে ব্যবহার করে না।