‘আমার ভাইয়ের কোনো অপরাধ ছিল না। সে বিনা দোষেই ফাঁসির দড়িতে ঝুলবে। সঙ্গ দোষে তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে তার স্ত্রীও ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এখন তার সন্তানগুলোর কী হবে? তাদের আর কেউই রইলো না। তাদেরকে আমি কী বলে সান্ত্বনা দেবো।’
নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে কান্না করতে করতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন তাসলিমা। তার ভাই শুক্কুর আলীসহ তিনজনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামল এ রায় ঘোষণা করেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে কিশোরী হত্যা মামলায় এ রায় ঘোষণা করেন আদালত।রায়ে একজনের যাবজ্জীবন এবং দোষী প্রমাণিত না হওয়ায় আরেকজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
শুক্কুর আলী বাদে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন কামরুল হাসান, রবিউল ইসলাম ও আলী আকবর। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির নাম ডলি বেগম। খালাস পেয়েছেন নাসরিন বেগম। আসামিদের মধ্যে রবিউল ইসলাম ও ডলি বেগম পলাতক।
আহাজারি করতে করতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শুক্কুর আলীর বোন তাসলিমা বলেন, ‘আমার ভাই সরলসোজা দিনমজুর ছিলেন। ইটভাটার ট্রাক্টরের চালক হিসেবে কাজ করতেন। সামান্য আয় দিয়েই তার সংসার চলতো। তার সংসারে দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। একটি মেয়ে ও একটি ছেলে এখনো ছোট। কিছুদিন আগে তার মা মারা যাওয়ার পর থেকে সন্তানরা শোকে পাগলপ্রায়। এবার তার বাবা ফাঁসিতে ঝুলতে যাচ্ছে। জানি না কোন অপরাধে তাদের এই বিপদের মুখে পড়তে হচ্ছে। কে তাদের এই বিপদ থেকে উদ্ধার করবে?’
কান্না করছিল শুক্কুর আলীর কিশোরী মেয়ে মিমও। সে বলে, ‘আমার বাবার কোনো দোষ ছিল না। অথচ তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই। কিছুদিন আগে মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। এখন বাবাকেও হারাতে হবে বিনা দোষে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী নুরুল আমিন মাসুম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা নির্দোষ। যেদিন ঘটনা ঘটে সেদিন শুক্কুর আলী নারায়ণগঞ্জেই ছিল না। তাহলে কীভাবে ধর্ষণ শেষে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে? আমরা এই রায়ে সস্তুষ্ট নই। আমরা হাইকোর্ট যাবো। আইন অমান্য করে এই রায় দেওয়া হয়েছে।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী সাইদুল ইসলাম সুমন জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনা ২০০৫ সালের ২ মের। ওইদিন ফতুল্লার চর রাজাপুর গ্রামের বাড়ি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রী তার ফুপুর বাড়ি লক্ষ্মীনগর গ্রামে দাওয়াত খেতে যায়। তারপর দিন থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। এরপর ৪ মে লক্ষ্মীনগর গ্রামের একটি ধইঞ্চা ক্ষেত থেকে ওই কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে ফতুল্লা থানায় মামলা করেন নিহত কিশোরীর বাবা। পরে পুলিশ প্রথমে ডলি বেগমকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখন ডলি পুলিশকে জানান, ওই কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। একই সঙ্গে হত্যাকারীদের নাম-পরিচয় বলে দেন তিনি। আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) রকিব উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আদালতে ১৭ জন সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে চারজনের ফাঁসি, একজনের যাবজ্জীবন এবং আরেকজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।