পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। কিন্তু প্রতারণায় মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করে রিটার্নিং অফিসার। যার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে তিনি হলে ইউসুফ গাজী। চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মনোয়নপত্র বাতিল হওয়ায় করেছিলেন নির্বাচনী আপিল। সেই আপিলও খারিজ হয়ে গিয়েছে। এখন এসেছেন হাইকোর্টে। করেছেন রিট। তাতে আপিল খারিজের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
দৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
এতে বলা হয়েছে, প্রতারণার মামলায় দণ্ডিত হলেও তা কোন প্রার্থীর ‘নৈতিক স্থলনজনিত’ অপরাধ নয়। আর ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হলেও সব সাজা প্রার্থীর অযোগ্যতা হিসাবে বিবেচনা করারও সুযোগ নাই। এছাড়া সাজার রায়ের বিরুদ্ধে রিভিশন মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এটার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রার্থীকে অযোগ্য ঘোষণা করার সুযোগ নাই।
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা রিট বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এস.এম মনিরুজ্জামানের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হতে পারে আজ।
গত ১০ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। সেই তালিকায় চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলটির প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পান ইউসুফ গাজী। যিনি ইতিপূর্বে চাঁদপুর পৌরসভা ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিও। গত ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। দণ্ডিত হওয়ায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর ইউসুফ গাজীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে। গত ২২ সেপ্টেম্বর তা খারিজ করে দেওয়া হয়। এই খারিজের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করেছেন হাইকোর্টে রিট। ১৭ অক্টোবর চাঁদপুর জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দণ্ডিত হওয়ার বিষয়টি জানতেন না; দাবি রিটে
সাইফ হুমায়ুন কবির নামে এক ব্যক্তি ২০০৪ সালের ৮ জানুয়ারি খুলনার চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রতারণার মামলা করেন। ওই মামলায় ইউসুফ গাজীকে আসামি করা হয়। ২০০৮ সালের ২৫ মে মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে বাদী দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন।
২০১১ সালের ৫ অক্টোবর আদালত আপিল মঞ্জুর করে আসামিকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ড দেয়। ইউসুফ গাজী দাবি করেছেন, এই সাজার রায় সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত নন। তার বিরুদ্ধে কোন নোটিশ বা সমন জারি করা হয়নি। তার অনুপস্থিতিতেই বিচার করা হয়েছে। যা ন্যায় বিচারের পরিপন্থী।
তবে ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি পুলিশ তার বাসভবনে অভিযান চালায়। তখন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। এরপরই সাজার রায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। ওই বছরই বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চ সাজার রায় স্থগিতের পাশাপাশি রুল জারি করেন। পরে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে দফায় দফায় ওই স্থগিতের মেয়াদ বাড়ায় আদালত।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৪ সালে ‘নো-অর্ডার’ দেয় চেম্বার আদালত। এরপরই সাজা বাতিল প্রশ্নে জারিকৃত রুল ২০১৭ সালে খারিজ করে দেয় বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ। ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। কিন্তু ২০১৯ সালে তা প্রত্যাহার করে নেন। চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর তার বাসায় আবারো অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ।
এরপরই তিনি সাজার বিষয়ে জানতে পারেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর খুলনার চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আত্মসমর্পন করে জামিন চান। আদালত জামিন আবেদন খারিজ করে তাকে কারাগারে পাঠায়। পরে আপিল করে হাইকোর্টে জামিন চান। গত ২৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুরের পাশাপাশি রুল জারি করে। এখন ওই রুল হাইকোর্টে বিচারাধীন।
ইউসুফ গাজীর কৌসুলি গাজী এইচএম তামিম ইত্তেফাককে বলেন, জামিন পাওয়া ও রুল জারির পর সাজাটা সাসপেন্ড রয়েছে। এছাড়া আপিলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে অযোগ্য ঘোষণার সুযোগ নাই। দণ্ডবিধির ৪২০ ধারার অপরাধ ‘নৈতিক স্থলনজনিত’ অপরাধ নয় এ বিষয়ে নানা সিদ্ধান্ত রয়েছে আদালতের।
ইত্তেফাক