Breaking News

মরিয়ম প্রভাবশালী, ঢাকার বিভিন্নজনের সঙ্গে আছে সম্পর্ক

খুলনার মহেশ্বরপাশা এলাকার গৃহবধূ রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে নানা নাটকীয় মোড় দেখা যাচ্ছে। ঘটনার পর থেকে রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নানের লাইমলাইটে আসা, তার নানা পোস্ট, মায়ের লাশ পাওয়ার দাবি ভাবিয়ে তুলেছিল সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

রহিমাকে পাওয়ার পর পাল্টেছে মরিয়মের ভাষাও। এসব কিছু নিয়ে গণমাধ্যমের পাঠক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা যখন আলোচনা-সমালোচনায় ব্যস্ত, তখন উঠেছে আরেক অভিযোগ। মরিয়ম মান্নান নাকি প্রভাবশালী, ঢাকায় তার আছে বিভিন্নজনের সঙ্গে সম্পর্ক!

এ অভিযোগ তুলেছেন রাহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি ফুলবাড়িগেট এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী হেলাল শরীফের স্ত্রী মনিরা আক্তার। হেলাল শরীফ গ্রেফতার আছেন।

এ ব্যাপারে মনিরা আক্তার গণমাধ্যমকে জানান, তার স্বামী হেলাল বিনা অপরাধে গত ২৮ দিন ধরে জেল খাটছেন। গত ৩০ আগস্ট হেলালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আগামী অক্টোবরে মনিরার সন্তান প্রসবের কথা থাকলেও স্বামীর দুশ্চিন্তায় গত ৬ সেপ্টেম্বর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। সে পরিস্থিতিতে স্বামীকে পাশে পাওয়া মরিয়ম মান্নানের জন্য হয়নি বলে দাবি তার।

মনিরা আরও বলেন, মরিয়ম খুব প্রভাবশালী। ঢাকার বিভিন্ন লোকের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। তিনি নিজে তার মায়ের নিখোঁজ হওয়ার মতো গর্হিত কাজ করেছে বলে আমি মনে করি। প্রভাবশালী লোক দিয়ে তিনি পুলিশকে প্রভাবিত করে আমার স্বামীকে জেল খাটাচ্ছেন।

তিনি বলেন, মরিয়মের কারণে অপরাধ না করেও আমার স্বামী জেল খাটছেন। এতে আমাদের হয়রানি, অর্থদণ্ড ও মানহানি হয়েছে। আমরা নিশ্চিত, গ্রেফতার হওয়া কেউই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

মনিরা আশা করছেন দ্রুত তার স্বামী জেল থেকে ছাড়া পাবেন। অন্যথায় তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন।

মরিয়মের বিরুদ্ধে মনিরা আক্তারের অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য গণমাধ্যম যোগাযোগ করে রহিমা বেগম নিখোঁজের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মান্নানের সঙ্গে। বিকেলে তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, অভিযোগের এ বিষয়টি আমি জানি না। রহিমা বেগম আদালতে জবানবন্দি দিচ্ছেন। এসব বিষয় সম্পর্কে পরবর্তীতে জানানো হবে।

এদিকে, মা হারানো নিয়ে মরিয়ম মান্নান যে ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত পর্যন্ত সেগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা করেছিলেন নেটিজেনরা। কিন্তু শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রাম থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধারের পর পরই আলোচনা রূপ নেয় সমালোচনায়।

প্রথম দিকে যারা মরিয়মের মায়ের খোঁজের আন্দোলনের পোস্টগুলো লাইক-কমেন্টে-শেয়ার করে ভার্চ্যুয়ালি সঙ্গে ছিলেন এখন তারাই বিরুদ্ধে লিখছেন।

কে এই মরিয়ম মান্নান?

বর্তমানে মরিয়ম মান্নান একজন নারীবাদী নেত্রী। তিনি একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ২০১২ সালে তার বাবা আব্দুল মান্নানের মৃত্যু হয়। এ সময় এসএসসি পরীক্ষা দেন তিনি। পাস করার পরে চলে আসেন ঢাকায়। শুরু হয় উশৃঙ্খল জীবন-যাপন।

ঢাকা আসার বেশ কিছুদিন পর তিনি বিয়ে করেন এক ডেন্টাল চিকিৎসককে। পরে তাকে ছেড়ে আরেকটি বিয়ে করেন বরিশাল জেলায়। তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আপনজনরা তেমন কিছুই জানেন না। ঢাকার অভিজাত একটি এলাকায় দুই-তিনটি নারী হোস্টেল খুলে ব্যবসা করছেন। সেখানে অবাধে নারী-পুরুষের যাতায়াত রয়েছে। একটি অসমর্থিত সূত্রে এমনটি দাবি করেছে। ফেসবুকে মরিয়মের কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, যা দেখে সূত্রটির দাবির সঙ্গে মিলে যায়।

মরিয়ম নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। তবে তিনি তেজগাঁও কলেজের ছাত্রী ছিলেন বলে জানা গেছে।

রহিমা বেগম যখন নিখোঁজ হন; গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সব জায়গায় তার ছয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে সক্রিয় উপস্থিতি ছিল মরিয়মের। তার কান্নার মধ্যে ছিল রহস্য, কথার ভেতর লুকোচুরি। কখনোই তিনি গণমাধ্যমকে সঠিক তথ্য দেননি। সংবাদকর্মীদের সঙ্গে তার রূঢ় আচরণের অভিযোগও রয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধেও এ তরুণী নানা অভিযোগ তুলেছেন।

দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এসব প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান। তিনি বলেন, মরিয়ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে এক এক সময় এক এক রকম মন্তব্য করেন। এ ঘটনায় আমরা বিব্রত। মা হারিয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবে যে কেউ একটু রিয়্যাক্ট করেন। এটাকে আমরা স্বাভাবিকভাবে দেখতে চাই। নিশ্চয়ই তিনি (মরিয়ম মান্নান) এখন কোনো পোস্ট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করবেন এবং উনার ভুল উনি স্বীকার করবেন।

মাকে পাওয়ার পর যা বললেন মরিয়মঃ রহিমা বেগমকে উদ্ধারের পর খুলনা পিবিআই কার্যালয়ে আসেন মরিয়ম। সেখান তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন। এ সময় বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয় তাকে। কিন্তু সব প্রশ্নের উত্তর তিনি দেননি। তিনি বলেন, আমার মাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছি এটাই বড় কথা। এর চেয়ে বেশি কিছু হতে পারে না। আমি আমার মাকে দেখেছি। এখন তার কাছে যেতে চাই।

এ ঘটনায় নিরপরাধ কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেন মামলা দেওয়া হলো প্রশ্ন করলে মরিয়ম বলেন, তারা আমাদের পরিবারকে বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিয়েছেন, নির্যাতন করেছেন। সেই সন্দেহের যায়গা থেকে তাদের নামে মামলা করা হয়।

আগেও লাইমলাইট পেয়েছেন মরিয়ম মান্নান; চার বছর আগেও কোটা আন্দোলনে পুলিশি হেফাজতে নিজের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে লাইমলাইট পেয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান। শারীরিকভাবে তাকে হেনস্তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ভাইরাল হন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার পোস্ট ছবি ভিডিও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করে।

সে সময় তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন মরিয়ম মান্নান। একটি ভিডিওতে দেখা যায়- কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহীদ মিনারে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। কয়েকজন সাংবাদিক তার সঙ্গে কথা বলতে আসেন। উত্তেজিত অবস্থায় তখন সাংবাদিকদের বলেন, আপনার জানতে চান ওই দিন তারা আমার কোথায় কোথায় হাত দিয়েছিল? কি বলেছিল? আপনাদের শুনতে ইচ্ছে করছে, আমার কোথায় কোথায় ধরেছে? আমাকে কীভাবে কী করেছে? সবাই আমাকে ফোন দিচ্ছে, তোমাকে কী করেছে? এখন আমি লাইভে যাব? লাইভে গিয়ে বলব আমাকে কী করেছে? কেমন করে ধরেছে? আমি কান্না করব আর সবাই আমাকে সহানুভূতি দেখাবে? সূত্র; বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।

Check Also

জুলুম থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তে বলেছেন

মহানবী (সা.) যেকোনো ধরনের জুলুম থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *