মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র কর্মসূচি ঘিরে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরাতন ফেরিঘাট এলাকা। সংঘর্ষে পুলিশ, বিএনপি নেতাকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্তত ৮০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বেলা তিনটার দিকে উপজেলার মুক্তারপুরের পুরনো ফেরিঘাট এলাকায় সমাবেশ শেষে মিছিল করতে গেলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতের মধ্যে অনেককেই আনা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গুলিবিদ্ধ এক বিএনপি কর্মীর অবস্থা সংকটাপন্ন। বিএনপি নেতা জানান, পুলিশের এক কর্মকর্তা তাদের কর্মসূচির ব্যানার ছিঁড়ে ফেলায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। মুহুর্মুহু ছোড়া কাঁদানে গ্যাস, গুলি ও রাবার বুলেটে তাদের ৫০-৬০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। অন্যদিকে পুলিশ দাবি করেছে, বিএনপি নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়েছে। এতে পুলিশের ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা তিনটার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে মিছিল নিয়ে মুক্তারপুর এলাকায় আসে।
এ সময় পুলিশ তাদের সেখানে অবস্থান করতে নিষেধ করে। এরপর তারা পুরনো ফেরিঘাট এলাকায় চলে যান। সেখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল আসতে শুরু করে। এ সময় মুন্সীগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম বিএনপি’র একটি মিছিলের ব্যানার ধরে টান দেন। এ নিয়ে নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তারা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। প্রথমদিকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট বিএনপি’র ইটপাটকেলের জবাবে গুলি ছোড়ে পুলিশ। পরে বিএনপি কর্মীরা পুলিশকে ঘিরে ধরলে তারা পিছু হটে। ঘটনাস্থলে বিএনপি’র এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন।
কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে পিছু হটতে হটতে ধলেশ্বরী নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখা যায়। বিকাল চারটার দিকে পুলিশের একাধিক দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া দু’জন গণমাধ্যমকর্মীও আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ থেকে সাত জনকে আটক করেছে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মিনহাজ উল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান, পরিদর্শক মোজাম্মেল হকসহ বেশ কয়েকজন উপ-পরিদর্শক আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
জেলা বিএনপি’র এক নেতা জানান, পুলিশের অনুমতির পরও আমাদের কর্মসূচি পালন করতে মানা করে পুলিশ। এরপর আমাদের লোকজন মিছিল করা বন্ধ করে দেয়। সে সময় পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মিছিল থেকে ব্যানার টেনে ছিঁড়ে ফেলতে চায়। তখন বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডা হয়। পুলিশ আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। পরে আমাদের লোকজন আত্মরক্ষায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান বলেন, পুলিশ সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিল। বিএনপি’র নেতাকর্মীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করেন। তাদের নিষেধ করায় তারা আরও ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে পুলিশের অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে মানবজমিন মেডিকেল রিপোর্টার জানান, মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি’র সংঘর্ষে আহত তিন জন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছেন। তারা হলেন- মো. শাওন (২০), মো. তারেক হোসেন (১৯) ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন (৪০)। তাদের মধ্যে শাওনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মাথায় আঘাত পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরের মুখে ছররা গুলি ও তারেকের মাথায় পিস্তলের বাঁট দিয়ে পুলিশ আঘাত করে বলে জানান নেতাকর্মীরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকা থেকে তিন জন আহত হয়ে এসেছে। তাদের একজনের অবস্থা গুরুতর।