Breaking News

২২ মামলার আসামি হয়েও মন্ত্রীদের নামে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মেজবাহ

মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী (৪২)। ২২ মামলার আসামি। ১১টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। আরো ১১টি মামলায় রয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। এরপরও হরেক রকম প্রতারণা করে আসছিলেন। উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, এমনকি কয়েকজন মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়েও প্রতারণা করেছেন। হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। টানা সাত বছর প্রতারণা করে অবশেষে ধরা পড়েছেন র‌্যাবের হাতে। গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতারক মেজবাহ উদ্দিনের ভয়ঙ্কর প্রতারণার তথ্য তুলে ধরেন র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা।

তারা জানান, শত কোটি টাকায় পুরানো একটি জাহাজকে স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির জন্য সীতাকুন্ডের কুমিরার সমুদ্র উপকূলবর্তী খাজা শিপইয়ার্ডে আনা হয় ২০১৫ সালে। কয়েক মাসের মধ্যে এরকম আরও কয়েকটি জাহাজ আনার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্যবসার অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দেন প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। এ কাজে সহযোগী হিসেবে তিনি আশেপাশের ২০-২৫ জন লোককে মাসিক বেতনে রাখতেন, যারা তার হয়ে বিনিয়োগে আগ্রহীদের বিভিন্ন তথ্য দিত। আগ্রহীরা মেজবাহর উক্ত ব্যবসার বিষয়ে যাচাই করার জন্য যখন তাদের জিজ্ঞাসা করতেন তখন তারা বলতেন, মেজবাহ স্যার খুবই ভাল মানুষ এবং তার ব্যবসার সবকিছু সঠিক রয়েছে। প্রতারনার শিকারদের দেওয়া তথ্য মতে, এভাবে তিনি পর্যায়ক্রমে ও ধাপে ধাপে ভুক্তভোগী আব্দুল হাকিমের কাছ থেকে দুই কোটি ২০ লাখ টাকা, আজগর আলীর কাছ থেকে ৭০ লাখ, মো. রেজওয়ানের কাছ থেকে ৪০ লাখ, ইব্রাহীমের কাছ থেকে ২০ লাখ, মো. রুমনের কাছ থেকে ৬৩ লাখ, শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৯০ লাখ, জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৫০ লাখ, আসাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ, বেলালের কাছ থেকে ৫০ লাখ এবং শাহজাহানের কাছ থেকে দুই কোটি টাকাসহ আরো অনেকের কাছ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

র‌্যাব জানায়, এই প্রতারক কিছু বাজেয়াপ্ত কনটেইনার দেখিয়ে প্রচার করেন একটি কনটেইনারে তিনি প্রচুর স্বর্ণ পেয়েছেন যা প্রায় ৫০০ কোটি টাকায় বিদেশে বিক্রি করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত টাকা সীজ করেছে। এছাড়াও তিনি ৫টি ডায়মন্ড পেয়েছেন যার প্রতিটির মূল্য দুই হাজার কোটি টাকা। ডায়মন্ডগুলোর বিক্রির টাকা পেতে হলে বিভিন্ন মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কিছু অংশ প্রদান করতে হবে। প্রতারক মেজবাহ ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীদের কন্ঠস্বর নকল করে কথোপকথনের রেকর্ড শুনাতেন।

এ প্রতারক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং কয়েকজন মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে তার ব্যবসার শেয়ার দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতেন এবং পরবর্তীতে তাদের কোম্পানীর শেয়ারের টাকার লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন ব্যাংকের চেক প্রদান করতেন।

ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা চেক নিয়ে ব্যাংকে গেলে দেখা যেত তার দেয়া চেকের বিপরীতে একাউন্টে কোন টাকা নেই। এভাবে তিনি বছরের পর বছর বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছেন। ভুক্তভোগীরা তার কাছে পাওনা টাকা চাইলে তিনি ভুক্তভোগীদের পূর্বে সংরক্ষিত স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ভূয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরি করে তাদেরকেই উল্টো মিথ্যে মামলার ভয় ও মামলা রুজু করে নাজেহাল করতেন। উক্ত মিথ্যে মামলার ভয়ে অনেক ভুক্তভোগীই পাওনা টাকার বিষয়ে মুখ খোলার সাহস করতো না।

এছাড়া উক্ত প্রতারক একই জমি বিক্রির কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নগরীর বাড়াইপাড়া এলাকায় একটি জমির ভূয়া দলিল দেখিয়ে অন্ততঃ ১০ জনের কাছে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম বিশেষ গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে জানতে পারে মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন হামজারবাগ সংলগ্ন আজাদ কমিউনিটি সেন্টারের উপর জনৈক মসিউর রহমানের ভাড়া বাসায় অবস্থান করছেন। রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে উপরোক্ত প্রতারনার কথা অকপটে স্বীকার এবং বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতারনা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার কথাও জানান তিনি। র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা যাতে সহজে তাকে খুঁজে না পান সে জন্য নিজ জেলা চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে স্থায়ী ঠিকানায় অবস্থান না করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করতেন। এছাড়াও একাধিক মোবাইলে ঘন ঘন সিম পরিবর্তন করে ব্যবহার করতেন যাতে তার সাথে কেউ সহজে যোগাযোগ করতে না পারে। প্রতারণার শিকার লোকজনের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করতে সম্প্রতি হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী এবং নগরীর কোতয়ালী থানায় বিভিন্ন প্রতারণার ২২টি মামলা পাওয়া যায়। যার মধ্যে ১১টি মামলাতে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। বাকী মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

Check Also

৩ দিনে ৭৮৩ বিএনপি নেতাকর্মী গ্রেফতার

১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গণগ্রেফতার চালানো হচ্ছে বলে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *