‘শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমার মায়ের মোবাইল ফোনে কল দেন খালা মনিকা বেগম (২৬)। ফোনে খালা বলেন, “আমাকে মেরে ফেললো। তোরা এসে আমাকে বাঁচা।” এরপর কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে রাত সাড়ে ৯টায় মনিকার বাড়িতে যান শামীম। গিয়ে দেখতে পান, ঘরের মেঝেতে মনিকার লাশ পড়ে আছে। বাড়িতে কেউ নেই। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে বিষয়টি জানান শামীম। রাত সাড়ে ১০টার দিকে কাশিয়ানী থানা পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।’ গৃহবধূ মনিকার মৃত্যুর বিষয়ে কথাগুলো বলছিলেন তার বোনের ছেলে শামীম হোসেন।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাতে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বাট্টাইধোবা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মনিকার পরিবারের দাবি, যৌতুক না পেয়ে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। গৃহবধূ মনিকা তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তিনি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার পাংখারচর গ্রামের খোকন শেখের মেয়ে।
নিহতের পরিবার জানিয়েছে, ২০১৮ সালে উপজেলার বাট্টাইধোবা গ্রামের হায়দার মুন্সীর ছেলে হাসিবের সঙ্গে মনিকার বিয়ে হয়। তাদের আড়াই বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের কয়েক মাস পরই তাদের মধ্যে কলহ শুরু হয়। হাসিব প্রায়ই যৌতুকের দাবিতে মনিকাকে নির্যাতন করতো। এ নিয়ে কয়েকবার থানায় অভিযোগ এবং গ্রাম্য সালিশও হয়েছে। বেশ কয়েকবার মনিকা তার বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে হাসিবকে দিয়েছেন। ঘটনার তিন দিন আগে বিদেশ যেতে টাকার জন্য মনিকাকে চাপ দেয় হাসিব। দরিদ্র ও বৃদ্ধ বাবা টাকার জোগান দিতে না পারায় মনিকাকে মারধর করে হাসিব ও তার পরিবারের লোকজন।
নিহতের বাবা খোকন শেখ বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই হাসিব ও তার পরিবারের লোকজন টাকার জন্য আমার মেয়েকে নির্যাতন করতো। বিষয়টি নিয়ে আমি কয়েকবার সালিশ ডেকেছি। তাতেও কোনও কাজ হয়নি। হাসিব ও তার পরিবারের লোকজন আমার মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। এই হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
কাশিয়ানী থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ ফিরোজ আলম বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। নিহতের গলায় দাগ রয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় মামলা হয়নি।’