দুই বছরের কন্যাশিশু আয়েশা খাতুন। বরাবরের মতোই ঘুমিয়ে ছিলেন পিতা-মাতার কোলে। কিন্তু সেই পিতা-মাতার হাতেই মর্মান্তিক মৃত্যু হয় আয়েশার। গত সোমবার দিবাগত রাতে ঘুমন্ত শিশুকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ঘিলাভুই গ্রামের বাদশা মিয়া ও তার স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন।
হত্যার পর প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী লাশ নিয়ে নিক্ষেপ করেন প্রতিবেশীর পানি ভর্তি কুয়ায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় গত মঙ্গলবার সকালে কুয়া থেকে ভাসমান লাশ উদ্ধার করে হালুয়াঘাট থানা পুলিশ। উদ্ধারে নেতৃত্ব দেন হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহিনুজ্জামান খান। এ ঘটনায় শিশুটির দাদি অভিযুক্ত আসামি বাদশা মিয়ার মাতা জুবেদা খাতুন বাদী হয়ে নিজ সন্তান ও পুত্রবধূকে আসামি করে হালুয়াঘাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহিনুজ্জামান খানের নেতৃত্বে এস আই আতাউর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযুক্ত পিতা বাদশা মিয়া ও মাতা আম্বিয়া খাতুনকে আটক করেন। গতকাল তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পরে বিচারকের সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ঘাতক পিতা-মাতা।
মামলা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে আসে শিশুটি হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযুক্ত ঘাতক আম্বিয়া খাতুনের তার পিতার বাড়ির আপন ভাইদের সঙ্গে ওয়ারিশান জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ দ্বন্দ্ব চলে আসছিলো। সেই বিরোধের জের ধরেই আম্বিয়া তার ভাইদের ফাঁসাতে বাদশা মিয়া আর তার স্ত্রী মিলে সাজায় হত্যার নাটক। নিজ সন্তানকে হত্যা করে তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে স্ত্রী আম্বিয়ার হাত-মুখ-পা বেঁধে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন স্বামী বাদশা মিয়া। একইসঙ্গে ঘরের এক পাশে খনন করেন সিঁধ।
উদ্দেশ্য শ্বশুরবাড়ির লোকদের ফাঁসানো। স্থানীয়রা জানান, সিঁধ দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে শিশুটিকে কেউ হত্যা করতে পারে এমনটা বোঝাতেই এ নাটক সাজিয়েছেন তারা। তবে সিঁধের আকার এতটুকু বড় যে, তার ভেতর দিয়ে মানুষ প্রবেশ করতে পারবে না। এদিকে, এত চক্রান্ত করেও শেষ রক্ষা হয়নি ঘাতক পিতা-মাতার। হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিশু হত্যার প্রাথমিক সত্যতা স্বীকার করে জানান, জড়িত পিতা-মাতাকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে হালুয়াঘাট থানায়।