কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় দলটির যেসব নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে, তাদের মধ্যে দুইজনের দেশের বাইরে অবস্থানের তথ্য মিলেছে।
গত শনিবার এই সংঘর্ষের পর ১৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশের কাজে বাধা, পুলিশ সদস্যের মারধরের অভিযোগ এনে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি করেন পাকুন্দিয়া থানার উপপরিদর্শক শাহ কামাল।
যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রধান আসামি করা হয়েছে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জালাল উদ্দীন ও যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দীন।
আসামিদের মধ্যে আছেন সৌদি আরব প্রবাসী আতিকুর রহমান লিটু। তিনি উপজেলার নারান্দী ইউনিয়নের ছোট আজলদী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি সবশেষ দেশে আসেন ২০২১ সালে। গত বছরের ২ আগস্ট ফিরে যান। তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য।
দুবাই প্রবাসী ৩৫ বছর বয়সী মো. রাসেলের নাম রয়েছে ১০০ নম্বরে। তিনি উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের চরতেরটেকিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
রাসেল উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিনের চাচাতো ভাই।
মামলার পর শনিবার বিকেল ও রাতেই উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ২৩ জনকে আটকের পর মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
লিটু ফোনে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে আছি। সময় সুযোগ পেলে ছুটি নিয়ে বাড়ি যাই। গিয়ে সর্বোচ্চ ছয় মাস থেকে আবার চলে আসি।
‘শুনেছি গত শনিবারে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ১৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ দেড় হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলাও করেছে। বেশ কয়েকজন কারাগারেও আছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, সেই মামলায় আমারও নাম রয়েছে! এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সৌদি আরব থেকে আমি ঘটনায় সম্পৃক্ত হলাম কী করে?’
বিদেশে থেকেও ‘পুলিশের ওপর হামলায়’ বিএনপির দুইজন
আরেক প্রবাসী রাসেল বলেন, ‘আমি দুই মাস ধরে দুবাইয়ে। গতকাল হঠাৎ করে জানতে পারলাম, আমাকে গ্রেপ্তার করতে বাড়িতে পুলিশ এসেছিল। শনিবারে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের যে সংঘর্ষ হয়েছে সেটাতে নাকি আমিও ছিলাম। এ জন্য আমার নামে মামলা হয়েছে। পরে আমাকে না পেয়ে বড় ভাই রহমত উল্লাহ রুবেলকে ধরে নিয়ে গেছে। আমার প্রশ্ন হলো, দুবাই বসে আমি মারামারিতে অংশগ্রহণ করলাম কীভাবে?’
পৌর সদরের সৈয়দগাঁও চৌরাস্তা এলাকায় শনিবার বেলা ১১টার দিকে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। ছাড়াও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আদু পাগলার মাজার, গরুরহাটা ও মঠখলা রোড এলাকায়।
প্রবাসে থাকা দুই জনকে আসামি করার বিষয়ে মামলার বাদী শাহ কামাল বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেককে আটক করেছি। পরে তাদের কাছ থেকে শুনে অন্যদের নাম লিখেছি।
‘অনেক সময় এমনও হয়। এত এত লোকের ভিড়ে এক দুইটা এদিক সেদিক হতে পারে। তবে এইক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত কোনো ভূল হয়ে থাকলে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সে বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বিদেশে থেকেও ‘পুলিশের ওপর হামলায়’ বিএনপির দুইজন
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাকুন্দিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নাহিদ হাসান সুমন বলেন, ‘আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। যদি তাদের সম্পৃক্ততা না পাই বা তিনি প্রবাসে থাকার বিষয়টি যদি প্রমাণিত হয়, তবে তাদের নাম বাদ যাবে।’