সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণী ধ’র্ষণ মা’মলায় গ্রে’প্তার শাহ মাহবুবুর রহমানকে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হয়
মঙ্গলবার বেলা ১১ টা ৪৫ মিনিট। কড়া পুলিশ প্রহরায় প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে নিয়ে আসা হয় আসা’মি শাহ মাহবুবুর রহমান রনি ও অজ্ঞাত আসা’মির তালিকায় থাকা রাজন মিয়া ও মো. আইনুদ্দিনকে। এরা সকলেই এমসি কলেজে তরুণী ধ’র্ষণ মা’মলার আসা’মি। এর মধ্যে রনি মা’মলার এজাহারভুক্ত দ্বিতীয় আসা’মি। আদালতে হাজির করার আগেই আদালত চত্বরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
রনি, রাজন ও আইনুলকে আদালত চত্বরে হাজির করার পর পুলিশী নিরাপত্তার মধ্যেই বিক্ষোভ করেন উপস্থিত জনতা। এই দুই আসা’মিকে নিয়ে আসার পর আদালতে চত্বরে শতাধিক জনতা জড়ো হন। তারা দুই আসা’মিকে দেখা মাত্রই ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ শ্লোগান শুরু করেন। ‘কুলাঙ্গারদের ফাঁসি চাই’ শ্লোগান দিতে দেখা যায় অনেককে। তবে পুলিশ তৎপর থাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
জনতার এই ক্ষোভের মধ্যেই পুলিশ নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে রনি, রাজন ও আইনুলকে সিলেট মহানগর হাকিম দ্বিতীয় আদালতে হাজির করে। আদালতে মা’মলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার ওসি (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য ৭ দিনের রিমান্ড চাইলে বিচারক সাইফুর রহমান তাদের ৫ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত রোববার রাতে মা’মলার ৩ নম্বর আসা’মি মাহবুবুর রহমান রনিকে হবিগঞ্জ থেকে গ্রে’প্তার করে র্যাব। এ ছাড়া রোববার দিবাগত রাতে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কচুয়া নয়াটিলা এলাকা থেকে রাজন নামের একজনকে গ্রে’প্তার করে র্যাব। তিনি এ মা’মলার অজ্ঞাতপরিচয় তিন আসা’মির একজন। এ সময় রাজনকে আশ্রয় দেওয়া ও সহযোগিতা করার অভিযোগে আইনুল নামের একজনকে গ্রে’প্তার করা হয়।
এদিকে সোমবার মাহবুবুর রহমান রনিকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, আসা’মি রনি যেসব তথ্য দিয়েছেন, তাতে তাদের মনে হয়েছে ঘটনার সঙ্গে সন্দেহভাজন রাজন ও আইনুলও জড়িত থাকতে পারে। সোমবার দিবাগত রাতে গ্রে’প্তার হওয়া মা’মলার ৬ নম্বর আসা’মি মাহফুজুর রহমান মাসুমকে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কাছে হাস্তান্তর করেছে সিলেট জেলা পুলিশ।
এর আগে সংঘবদ্ধ ধ’র্ষণ মা’মলার প্রধান আসা’মি সাইফুর রহমান, ৪ নম্বর আসা’মি অর্জুন লস্কর ও ৫ নম্বর আসা’মি রবিউলকে গতকাল পাঁচ দিন করে রিমান্ড দেন আদালত।
গত রোববার সকালে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা থেকে সাইফুর রহমান ও হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মনতলা এলাকা থেকে অর্জুন লস্করকে গ্রে’প্তার করা হয়। সেদিন রাতে এ মা’মলার আরেক আসা’মি রবিউল ইসলামকে হবিগঞ্জ থেকে গ্রে’প্তার করা হয়। নবীগঞ্জ উপজেলার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে রবিউলকে গ্রে’প্তার করা হয়।
জানা গেছে, স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এমসি কলেজে গিয়েছিলেন এক গৃহবধূ। এ সময় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে পাঁচ থেকে ছয়জন তাদের জোরপূর্বক কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধ’র্ষণ করে তারা। পরে ওই গৃহবধূকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় গত শনিবার ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো তিনজনকে আসা’মি করে মা’মলা করেন। মা’মলার আসা’মিরা হলেন সাইফুর রহমান (২৮), শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), তারেক (২৮), অর্জুন লস্কর (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫) ও মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫)। তাঁদের মধ্যে সাইফুর রহমান বালাগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা, রনির বাড়ি হবিগঞ্জে, তারেক সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা, অর্জুনের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে, রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় আর মাহফুজুর রহমান মাছুমের বাড়ি সিলেটের সদর উপজেলায়।
অভিযোগ উঠেছে, মা’মলার এই ছয় আসা’মি ছাত্রলীগের কর্মী। এ বিষয়ে ওসি আবদুল কাইয়ুম জানান, মা’মলায় ছয়জনকে সরাসরি জড়িত বলে আসা’মি করা হয়েছে। তবে মা’মলার এজাহারে তাঁদের ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়।
এর আগে অভিযান চালিয়ে মা’মলার আসা’মি এম সাইফুর রহমানের কক্ষ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে সাইফুরের কক্ষ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি রামদা, একটি ছোরা ও জিআই পাইপ উদ্ধার করা হয়।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএস