বাংলাদেশ সরকার চীনের অর্থায়নের তিস্তা নদী প্রকল্প নির্মাণের যে পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটাকে স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি (আইএফসি)। তারা বলেছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে উজানে ভারতের উপর বাংলাদেশের আর নির্ভরতা থাকবে না। বাংলাদেশ আর ভারতের মধ্যে যে সব অভিন্ন নদী রয়েছে, সেগুলোর পানির সমবণ্টন নিয়ে প্রচারণা চালায় এই কমিটি।
শনিবার এক বিবৃতিতে কমিটি বলেছে, ৮০ বিলিয়ন টাকা ব্যয়ে এই সমন্বিত প্রকল্পিত নির্মিত হলে সেটা শুধু বার্ষিক বন্যা আর ভাঙনই রোধ করবে না, বরং একই সাথে বাংলাদেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও নিশ্চিত করবে সেটা।
তারা বলেছে, “এই প্রকল্প ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী বরাবর টেকসই উন্নয়ন গড়ে তুলবে। নীলফামারির ডালিয়া পয়েন্টের তিস্তা ব্যারেজ থেকে নিয়ে মহিপুর আর কাউনিয়া হয়ে ব্রহ্মপুত্রে পড়া পর্যন্ত নদীর দৈর্ঘ হলো এই ১০২ কিলোমিটার”।
আইএফসির নেতারা তাদের বিবৃতিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে যাতে তারা বর্তমান তিস্তা প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় এবং সেটা বাস্তবায়ন করে। একই সাথে মূল তিস্তা সমতলকে তারা এ প্রকল্পের অধীনে নেয়ার দাবি জানিয়েছে, যাতে দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন হতে পারে।
তারা বলেছে বাংলাদেশে তিস্তা নদী কার্যত মরে গেছে কারণ বহু দশক ধরে নদীতে অতিরিক্ত পলি জমেছে এবং স্বাভাবিক পানির প্রবাহ তারা পাচ্ছে না। এই প্রবাহ না থাকায় সেটা পরিবেশের ক্ষতি করছে এবং মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়েছে।
তিস্তা সমতলে খরার মাত্রা ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। শুকনা মওসুমে হেঁটে নদী পার হতে পারে মানুষ। বর্ষা মওসুমে ভারত গজল ডোবা বাধ খুলে দিয়ে পুরো পানির প্রবাহ ছেড়ে দেয়।
কিন্তু নদীর গভীরতা না থাকায় নদী এই পুরো পানির চাপ নিতে পারে না। ফলে পুরো বর্ষা মওসুমে ব্যাপক বন্যা হয় এবং নদী ভাঙন চলতে থাকে। চলতি বছর চার দফা বন্যা হয়েছে এবং নদীর দুই পাড়ের মানুষ সর্বসান্ত হয়ে গেছে। বারবার আশ্বাস দেয়ার পরও বাংলাদেশ শুকনা মওসুমে এই নদীর পানির হিস্যা পায়নি।
উজানে এই নদীর পানির গতি বদলিয়ে গঙ্গায় নেয়া হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে ভারতের এই নদীর পানি ভাগাভাগির সম্ভাবনা আরও কমে যাচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তিস্তা নদী প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে, যে প্রকল্পের আওতায় নদীর নাব্যতা বাড়ানো হবে এবং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ১৭০ বর্গকিলোমিটার নদীপথ উদ্ধার এবং মূল চ্যানেল গড়ে তোলার পর এর দুই পাড়ে স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলা হবে।
এখানে উচ্চ উৎপাদনশীল শিল্প ও কৃষির উন্নয়ন করা হবে। সোলার পার্ক, স্কুল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মসজিদ ও সাধারণ মানুষের জন্য সাধারণ সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।