কয়েকদিন আগেও গভীর বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়েছিল প্রচুর ইলিশ। কিন্তু হঠাৎ করে কয়েকদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে তেমন ইলিশের দেখা মিলছে না। এ নিয়ে মন খারাপ জেলেদের। তবে কম ধরা পড়ায় ইলিশের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ।
আজ বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) অল্প পরিমাণ ইলিশ নিয়ে পটুয়াখালীর মহিপুর আলীপুর মৎস্য বন্দরের ঘাটে এসেছে কয়েকটি ট্রলার। ট্রলার থেকে শ্রমিকরা টুকরিতে করে ইলিশ নিচ্ছেন আড়তে। সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত বিক্রি হয়ে যায় ইলিশগুলো। অথচ কয়েকদিন আগেও ইলিশের তেমন চাহিদা ছিল না। হঠাৎ ইলিশ কম ধরা পড়ায় চাহিদা বেড়েছে।
এজন্য পাইকারি ক্রেতাদের অল্প সময়ের মধ্যেই দরদাম শেষে ইলিশ ক্রয় করতে দেখা যায়। আর দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য ককশিট বক্সে ভরে ইলিশ প্যাকেট করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাগরে জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়বে ইলিশ একথা সত্যি নয়। মাঝে মধ্যে বা (জোবায় জোবায়) ধরা পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই ইলিশের দেখা মিলছে না ।
যেমন এখন তেমন ইলিশ ধরা পড়েছে না। অথচ কয়েকদিন আগেও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছিল।কয়েকজন জেলে বলেন, ‘আজ বৃষ্টি শুরু হয়েছে, পূবের বাতাস থাকলে আবার ইলিশ ধরা পড়তে পারে। তবে নিশ্চিত করে বলা যায় না। ইলিশ ধরা পড়লে একদিনে লাখপতি। ধরা না পড়লে ট্রলার ভাড়া, তেল এবং যাবতীয় খরচ পকেট থেকে দিতে হয়। কয়েকদিন আগে প্রচুর ইলিশ পড়েছে, তবে এরমধ্যেও অনেক জেলে তেমন ইলিশ পায়নি। এটা ভাগ্যের ব্যাপার, তবুও সবাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, ভাগ্যের পরিবর্তন হতে কতক্ষণ লাগে!
বুধবার মহিপুর-আলীপুর মৎস্য বন্দরে ইলিশ বিক্রি করতে আসা রাঙ্গাবালী উপজেলার জেলে মো. বশির প্যাদা বলেন, ‘আজ ১৫ মণের মতো ইলিশ ও অন্যান্য প্রজাতির ১০ মণ সামুদ্রিক মাছ নিয়ে আড়তে এসেছি। আমার বোর্ডে ১৫০ মণ ইলিশ ধরে। সাগরে প্রচুর মাছ থাকলেও এখন মিলছেনা। এখন মাছ সংকট, তাই দামও বেশি।’তিনি বলেন, ‘আজ এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের মণ ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। দ্বিতীয় গ্রেডের অর্থাৎ ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি।
আজ পাইকাররা এসেছেন কিন্তু বাজারে মাছ নেই।’মহিপুরের জেলে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সাগরে মাছ এই আছে এই নেই। কারো জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে আবার পাশের জেলের জালে মাছের দেখা নেই। কেউ কেউ সাগরে এক সপ্তাহ ঘুরেও মাছ পান না। হঠাৎ একদিন দেখা যায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়েছে। ইলিশ পানির মধ্যে দৌড়ের প্রতিযোগিতা করে। ইলিশ গভীর পানির মাছ। হুট করে সাগরের গভীরে ঝাঁক বেঁধে চলে যায়। যখন ওপরে ওঠে জেলেদের জালে ধরা পরে। তিনদিন ধরে ট্রলার নিয়ে সাগরে গিয়ে খালি ফিরে এসেছি। মাছ ধরা পড়েনি। হয়তো সামনে বৃষ্টি হলে মাছ ওপরে উঠবে, তখন ধরা পড়বে।’রাঙ্গাবালী উপজেলার জেলে মো. মতি হোসেন বলেন, ‘গভীর সাগরে কম-বেশি মাছ ধরা পড়ে।
যাদের ট্রলার ছোট তারা গভীর সাগরে যেতে পারে না, তাই তারা মাছ কম পায়। সাগরের মধ্যে ভালো পানি দেখে বেশি প্রস্থের লাল জাল ফালাইলে তখন বেশি মাছ তাদের জালে ধরা পড়ে। ইলিশ কখন কার জালে ধরা পড়বে তা কেউ জানে না।’মহিপুর মৎস্য আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি আনসার মোল্লা বলেন, ‘এই সময় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার কথা থাকলেও জেলেদের জালে ইলিশের দেখা নেই। হঠাৎ ইলিশের অকাল দেখা দেওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে জেলেরা। কারণ, এখন জেলেদের ঋণশোধ করার সময়। বর্তমানে যে মাছ পড়ছে এতে জেলেরা আরও ঋণগ্রস্ত হচ্ছে।’পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা ইমদাদুল্লাহ বলেন, ‘সাগরে যে ইলিশ নেই এমন না।
নিম্নচাপের কারণে ইলিশ কম ধরা পড়ে। তবে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় ইলিশ বেশি ধরা পড়ে। সাগরে প্রচুর ইলিশ আছে। তবে এবছর ছোট মাছ নেই, জেলেদের জালে বড় বড় ইলিশ ধরা পড়ছে। এসব মাছ গভীর সাগরে থাকে। জেলেদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এখন জালে ইলিশ ধরা না পড়লেও সামনে ইলিশ ধরা পড়বেই।