Breaking News

হঠাৎ তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ‘গভীরতার’ নেপথ্যে

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তুরস্কের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম ঢাকায় পৌঁছালে তাকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা জানানো হয়। ফাইল ছবি
তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কটা তিক্ত ছিল অনেকদিন। মাঝখানে প্রায় ছয় বছর ধরে দুই দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের কিছু সফর হলেও সম্পর্কে একটা শীতল ভাব বিরাজ করছিল। বিশেষ করে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে যু’দ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে তুরস্কের নাক গলানো ঢাকাকে এতটাই ক্ষুব্ধ করে যে বাংলাদেশী সরকার প্রকাশ্যে তুরস্ক বিরোধী শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করে।

অন্যদিকে তুরস্ক থেকে একটি পুরনো সাবমেরিন কেনার বিষয়ে অনেকখানি এগোনের পরেও বাংলদেশ সরকার চীন থেকে দুটি সাবমেরিন এনে বাংলাদেশের নৌবহরে যুক্ত করলে আঙ্কারার সঙ্গে সম্পর্ক আরো খারাপ হয়।
বাংলাদেশ তুর্কিদের ভিসা দিতে গড়িমসি করা, তুর্কিদের ঢাকা বিমানবন্দরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখাসহ তাদেরকে বিভিন্নভাবে হেস্তন্যাস্ত করা হয়। এক পর্যায়ে বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে উভয় দেশ তাদের রাষ্ট্রদূত নিজ নিজ দেশে ডেকে পাঠায়। অনেক দিন দু’দেশ রাষ্ট্রদূত ছাড়াই সম্পর্ক চালায়।

এর ভেতরেই দুই দেশে ঘটে দুই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ২০১৬ সালে তুরস্কে ঘটে যাওয়া ব্যর্থ সা’মরিক অভ্যূত্থান। আর ২০১৭ সালে বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলদেশে আশ্রয়।
বাংলাদেশ-তুরস্কের সম্পর্ক নিয়ে এসব বিশ্লেষণ করেছেন তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সরোয়ার আলম।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এশিয়া প্যাসিফিক আঞ্চলিক প্রধান সরোয়ার আলম যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ-তুরস্কের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের পেছনে দু দেশের সদিচ্ছা প্রধান ভূমিকা পালন করছে।এ ছাড়াও দু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক বিষয়গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও বাংলাদেশ এবং তুরস্কের মধ্যকার সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করছে।
বাংলাদেশকে কেন তুরস্ক এতটা গুরুত্ব দিচ্ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে গত ১৫ বছর ধরে অবস্থান করা বাংলাদেশি সাংবাদিক সরোয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও বিপুল জনসংখ্যা এবং বিশেষ করে বিশাল পরিমাণের যুবসমাজের কারণে বাংলাদেশ তুরস্কের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার।

বাংলাদেশ কেন তুরস্ককে গুরুত্ব দিচ্ছে?
বাংলাদেশ কেন তুরস্ককে গুরুত্ব দিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালনকারী বাংলাদেশি এ সাংবাদিকের মতে, তুরস্কের দ্রুত উন্নয়নশীল শিল্প খাত, সা’মরিক খাত, ভারী যন্ত্রাংশ তৈরিতে এদেশের সাফল্য সবকিছু মিলিয়ে দেশটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এ ছাড়াও মুসলিম বিশ্বে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তুরস্কের মতো আর কোনো দেশ বাংলদেশের পাশে দাঁড়ায়নি। সুতরাং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পশ্চিমা বিশ্বে বাংলদেশের পক্ষে ভবিষ্যতেও একমাত্র তুরস্কই তার সর্বশক্তি দিয়ে বাংলদেশের পক্ষে কথা বলবে। এসব বিবেচনায়, বাংলাদেশের কাছে তুরস্কের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক প্রয়োজন। এসব নানা দিক বিবেচনা করেই বাংলাদেশও হয়তো তুরস্কের সঙ্গে ঘনিষ্টতা বাড়াচ্ছে।
‘আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান, তার স্ত্রী এমিনে এরদোগান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলুকে গতকাল (১৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সফরের যে উষ্ণ আমন্ত্রণ জানালেন তাতে দু দেশের সম্পর্ক খুব দ্রুত নতুন উচ্চতায় পৌঁছারই ইঙ্গিত দেয়।’-যোগ করে সরোয়ার আলম।

তুরস্ক-বাংলাদেশের সম্পর্ক গভীর হওয়ার নেপথ্যে
এ প্রসঙ্গে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এশিয়া প্যাসিফিক আঞ্চলিক প্রধান সরোয়ার আলম বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আবেগের কোনো মূল্য নেই আর এক্ষেত্রে কেউ পরম বন্ধু বা পরম শত্রু হতে পারে না। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে রাষ্ট্রের স্বার্থ সবার উপরে। এখানে “উইন উইন পরিবেশ” গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীতে, রোহিঙ্গা বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের ‘পরম মিত্র’ এবং ‘সা’মরিক মনিব’রা যখন তাদের নিজস্ব স্বার্থে ঢাকাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন, বাংলাদেশ তখন বুঝলো যে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ‘পরম বন্ধু’ বলে কিছু নেই। ওখানে আবেগের কোনো স্থান নেই। সবাই যার যার স্বার্থে অন্যকে ব্যবহার করে। তখন যদিও অনেক পানি গড়িয়ে গেছে বহু দূর।

তিনি বলেন, গঙ্গা এবং তিস্তার পানি চুক্তি, আসামে প্রায় ২০ লক্ষ ‘অবৈধ বাংলাদেশী’কে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনাসহ সাম্প্রতিক অনেক ঘটনায় প্রতিবেশীর বন্ধুসুলভ আচরণের পরিধিটা আস্তে আস্তে স্পষ্ট হয়ে উঠে। সর্বশেষ ধাক্কাটা একেবারে নাড়িতে এসে যখন আঘাত করলো, ঢাকা তখন বুঝলো পেঁয়াজের ঝাঁজ কত ভয়ংকর।
পেঁয়াজ আমদানিতে শুধুমাত্র একটি বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা যে কত মারাত্মক ভুল ছিল বাংলাদেশ সেটা হাড়ে হাড়ে টের পায় । হন্যে হয়ে এখন অন্য বাজারের দিকে দৌড়ায় বাংলাদেশ। পেঁয়াজের বাজারের আগুন নিভাতে তখন পাকিস্তান, তুরস্ক আর মিসরের দ্বারস্থ হয় বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে বাংলাদেশ।
সূত্র: যুগান্তর

Check Also

জুলুম থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তে বলেছেন

মহানবী (সা.) যেকোনো ধরনের জুলুম থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *