বাংলাদেশের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক নষ্ট করে এমন যে কোন ঘটনা প্রতিরোধের ব্যাপারে ভারতের সরকার ও সমাজের একটি দায় রয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন রোববার এ কথা বলেন।
আগামী ৫ আগস্ট অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের জবাবে এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশের ভাষ্যকারদের মতে রাম মন্দির ইস্যু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কট্টর বিরোধীদের জন্য নতুন রাজনৈতিক সুযোগ এনে দেবে। মন্ত্রী মোমেন গত সপ্তাহে হাসিনা ও তার পাকিস্তানি প্রতিপক্ষ ইমরান খানের মধ্যে টেলিফোন আলাপকে সমর্থন করে বলেন, এ ধরনের আলোচনায় অস্বাভাবিক কিছু নেই।
মন্দির নির্মাণ প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক ও আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা এই মন্দির নির্মাণ নিয়ে আমাদের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেব না। কিন্তু আমি ভারতকেও বলবো যেন এমন কোন ঘটনা ঘটতে দেয়া না হয় যা আমাদের মধ্যে সুন্দর ও গভীর সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটা দুই দেশের জন্যই ভালো এবং আমি বলবো যে দুই দেশকে এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন এ ধরনের বিঘ্নতা এড়ানো যায়।
মন্ত্রী ঢাকা থেকে টেলিফোনে এই পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সবাইকে সুসম্পর্ক বিকশিত করার জন্য ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষার দায় আপনাদের সমাজেরও রয়েছে। একা সরকার এ ধরনের বিষয়গুলো সামাল দিতে পারে না। সম্পর্ক যেন সঠিক পথে এবং মনযোগ উন্নয়ন তৎপরতার উপর থাকে তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার অংশ জনগণ ও মিডিয়াও।
দ্বিজাতি তত্ত্ব
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও সুশিল সমাজের সদস্যদের উদ্বেগও যুক্ত হয়েছে। তারা বলছেন, মন্দির নির্মাণ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও তা বাংলাদেশের জনগণের আবেগের উপর প্রভাব ফেলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এই ঘটনা বাংলাদেশে এককত্বের রাজনীতিকে সুযোগ এনে দেবে। অথচ ১৯৭১ সালে দ্বিজাতি তত্ত্ব থেকে সরে এসেছিলো বাংলাদেশ। এই তত্ত্ব নিয়ে আমরা স্বস্তি অনুভব করি না কিন্তু লক্ষণগুলো বলছে যে ভারত দ্বিজাতি তত্ত্বের পথে হাটছে। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের উপর রাম মন্দির ইস্যুর প্রভাব প্রতিরোধের জন্য তিনি ভারতের প্রতি আহ্বান জানান।
অ্যালায়েন্স এগেইনিস্ট এক্সট্রিমিজম অ্যান্ড টেররিজমের ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ ইস্যুতে বাংলাদেশে মৌলবাদী শক্তিগুলো নতুন প্রাণ পাবে। তার মতে, যখন মৌলবাদী শক্তিগুলো শক্তিশালী হয় তখন বাংলাদেশ ও ভারতের সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ পোহায়। এই ঘটনা বাংলাদেশে দ্বিজাতি তত্ত্বের পক্ষের লবিটিকে শক্তিশালী করবে।
ঢাকার কিছু ঘটনাবলী প্রতিবেশী দুই দেশের মতবিরোধ বাড়াচ্ছে এমন কথা বলার জন্য ‘কায়েমী স্বার্থবাদীদের’ দায়ি করেন মোমেন। এর আগে খবরে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশে ভারতের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত রিভা গাঙ্গুলি দাস বার বার চেষ্টা করেও প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সাক্ষাত পাননি। ঢাকার সূত্রগুলো বলছে যে করোনাভাইরাসের কারণে এটা হয়েছে। মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বৈঠক আবার শুরু হবে জানিয়ে একটি সূত্র বলে, প্রধানমন্ত্রীর বেশিরভাগ এনগেজমেন্ট ডিজিটাল প্লাটফর্মে স্থানান্তর করা হয়েছে। মহামারীর সময় আমরা নেতার নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যকেই প্রাধান্য দিচ্ছি।
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বাস একই বিশ্বে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক শান্তি চায়। তাই সবার সঙ্গেই সংলাপ প্রত্যাশা করে। গত সপ্তাহে হাসিনা ও ইমরানের মধ্যে ফোনালাপকে সৌজন্যমূলক হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
টেলিফোনের বিষয়টি ফুলিয়ে ফাপিয়ে প্রচার করার জন্য মিডিয়াকে দায়ি করে তিনি বলেন, পাকিস্তান যদি আমাদেরকে টেলিফোন করে তাতে সমস্যা কোথায়? তারা আমাদেরকে ফোন করলে কোথাও সমস্যা থাকতে হবে? আমরা সবাইতো একই দুনিয়ায় বাস করি।
টেলিফোনে দুই নেতা কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করেন বলে জানান তিনি।
পাকিস্তান বলেছে যে কাশ্মির প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন খান।কাশ্মির প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কিছু বলেনি।