স্বাস্থ্যখাতে লুটপাটের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদ উপনেতা জিএম কাদের। তিনি বলেন, যারা এক সময় এরশাদের স্বাস্থ্যনীতির বিরোধিতা করেছেন এখন তারাই গুণগান করছে। আমরা সংসদে স্বাস্থ্যখাত, শিক্ষাখাতসহ সরকারের বিভিন্ন খাতের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে কথা বলে আসছি, বিচার দাবি করেছি। এরই প্রেক্ষিতে সরকার জড়িতদের বিরুদ্ধে তৎপর হয়েছে। এর জন্য সরকার প্রধানকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে আগামীতে আর কেউ এমন অনিয়ম দুর্নীতির সাহস না পায়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রংপুরের পল্লী নিবাসে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যু বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আওয়ামী লীগের সবাই দুর্নীতির সাথে জড়িত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেষ্টা করলেও দুর্নীতিবাজদের কারণে সরকারের অনেক প্রচেষ্টা সফল হচ্ছে না। স্বাস্থ্যখাত থেকে শুরু করে প্রায় সকল সেক্টর এখন দুর্নীতিবাজদের দখলে। তাদের আধিপত্য সরকারের সকল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরশাদের মৃত্যুর দিনে বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচনের ভোট আয়োজন দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সরকারের তাবেদার হয়ে গেছে। তাঁরা ভোট চুরির নির্বাচন উপহার দিতে এমনটা করেছে। এভাবে চলতে থাকলে জনগণ একদিন ঠিকই নির্বাচন কমিশনের গলা টিপে ধরবে। এসময় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উত্তরাঞ্চলের হারানো জাতীয় পার্টির ২১টি আসন ফিরে আনার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন রাঙ্গা।
আলোচনা সভায় রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও দলের অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, যুগ্ম মহাসচিব এসএম ইয়াসির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।
এর আগে দলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে এরশাদের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এসময় দলের প্রয়াত চেয়ারম্যানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পরে পল্লী নিবাসে চত্ত্বরে বৃক্ষরোপণ করেন তিনি।
এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে ঢাকা থেকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও সংসদ সদস্যরা সকালে বিমানযোগে সৈয়দপুরে আসেন। সেখান থেকে গাড়িবহরে করে পল্লী নিবাসে পৌঁছে এরশাদের সমাধির পাশে দাড়িয়ে নীরবতা পালন করেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, মীর আবদুস সবুর আসুদ, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, সোলায়মান আলম শেঠ, মেজর (অব:) রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি, নাজমা আক্তার এমপি, আলমগীর সিকদার লোটন, আবদুস সাত্তার, জহিরুল ইসলাম, উপদেষ্টা নুরুল ইসলাম তালুকদার এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান আদেল এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট আবু তৈয়ব, যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম, জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি ইব্রাহিম খান জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন প্রমুখ।
এদিকে কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং এরশাদ ভক্তরা সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকাল থেকেই পল্লী নিবাসে ঢাকা থেকে আসা নেতারা ছাড়াও উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতা-কর্মীদের সমাগম হয়। শ্রদ্ধা নিবেদনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে পল্লী নিবাস চত্বরে প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের জীবনকর্ম ও রাজনৈতিক দর্শন শীর্ষক আলোচনা সভাসহ এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রংপুরে সকাল থেকেই কোরআন খতম, নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে মাইকের মাধ্যমে কোরআন তেলাওয়াত ও তার রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচার, দুপুরে অসহায় দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ এবং বিকেলে মসজিদ-মন্দিরসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।