রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের অভিযান, টেস্ট না করেই দেওয়া হতো করোনা পজেটিভ নেগেটিভ সনদ।
রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে ৮ জনকে আটক করেছে র্যাবের মোবাইল কোর্ট। র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে র্যাব সদস্যরা এই পরিচালনা করে। হাসপাতালটি টেস্ট না করেই কোভিড-১৯ ‘পজেটিভ’ ও ‘নেগেটিভ’ সনদ দিত বলে জানিয়েছেন অভিযানকারী দলের প্রধান।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘২০১৪ সালে অর্থাৎ ৬ বছর আগে হাসপাতালটির ইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবুও তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে কিভাবে সনদ নিয়েছে বোধগম্য নয়। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’ হাসপাতালটির উত্তরা ও মিরপুর শাখায় একযোগে অভিযান চলছে উল্লেখ করে সারোয়ার আলম বলেন, ‘সরকারিভাবে যে টেস্টগুলো ফ্রি করার কথা সেই টেস্টের জন্য রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাড়ে তিন হাজার টাকা করে নিচ্ছে। সবচাইতে জঘন্য যে কাজ করেছে সেটা হলো টেস্ট না করে রিপোর্ট দেওয়া এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সিল ও প্যাড ব্যবহার করা। জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট বা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) সহ যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্যাড ও সিল তারা ব্যবহার করেছে ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়েছে ওইসব সিল বা প্যাড তাদের নয়। এছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা চিকিৎসার নামে সরকারের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে আবার রোগীদের কাছ থেকেও মোটা অংকের বিল নিচ্ছে। হাসপাতাল থেকে বিপুল পরিমাণ কোভিডের বিপুল পরিমাণ ভুয়া সনদ জব্দ করা হয়েছে।
গত মার্চ মাসের শেষ দিকে উত্তরা ও মিরপুরে রিজেন্ট হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়। সেখানে করোনা চিকিৎসার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। গত ২৩ মার্চ রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় এলাকার লোকজনের ওপর হামলার করে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিকের ভাড়া করা মাস্তান বাহিনী।
এলাকাবাসীর আপত্তির মুখে রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের অন্ত নেই। রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা নিয়ে নানা ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন বহু মানুষ। রিজেন্ট হাসপাতাল আসলে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের নাম করে করোনা পরীক্ষার ভুয়া ফলাফল দিত। রিজেন্ট হাসপাতাল করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করলেও সেগুলো পরীক্ষা না করিয়েই মনগড়া রিপোর্ট দিতো বলেও ভুক্তভোগী লোকজন অভিযোগ করেন।
জানা গেছে, হাসপাতাল পরিচালনার লাইসেন্সের মেয়াদ ৬ বছর আগেই শেষ হয় রিজেন্টের। তারপরও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে করোনা চিকিৎসা দিতে থাকে তারা। তবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা চললেও রোগীদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে।
এছাড়া করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে কেবল হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করানোর কথা থাকলেও তারা অনুমতি ছাড়াই বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতো রিজেন্ট হাসপাতালের এজেন্টরা।
আলম নামে এক ব্যক্তি জানান, ‘করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে তিনি পরীক্ষা করাতে চান। তার পরিবারেরও কয়েকজনের একই ধরনের উপসর্গ ছিল। রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে গত ২৭ জুন হাসপাতাল থেকে তারিক শিবলী নামে এক কর্মকর্তা আলমের বাসায় যান নমুনা সংগ্রহ করতে। ৬ জনের নমুনা নিয়ে ফি হিসেবে সাড়ে চার হাজার চাকা করে ২৭ হাজার টাকা নেন তিনি। কোন রশিদ না দিয়ে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে আসেন শিবলী। ২৯ জুন নমুনা পরীক্ষার ফল পান সাইফুল। ই-মেইল ঠিকানা থেকে যায় রিপোর্ট সেটি ছিল রাজধানীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিউটের (আইপিএইচ) প্যাডে। ইমেইলে নমুনা সংগ্রহের সাইট হিসেবে রিজেন্ট হাসপাতাল ও রেফার্ড বাই রিজেন্ট হাসপাতাল লেখা ছিল। নমুনা পরীক্ষায় ৬ জনের মধ্যে দু’জন পজিটিভ ও ৪ জন নেগেটিভ আসে। রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ জানালে ৩ জুলাই ফের তাদের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হয়। এবার তাদের নমুনা পরীক্ষার ফল আসে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনের (নিপসম) ওয়েবসাইটে।
তবে এবার আলমের পরিবারে নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ৪ জন পজিটিভ ও ২ জন নেগেটিভ। আগের বারের ৪ জনেরই রিপোর্টে নেগেটিভ ছিলো। শুধু তাই নয়, নিপসমে এই ৬ জনের নমুনা সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই দেখানো হলেও ওই দিন আলম বা তার পরিবারের কারও কোনো নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি।
অভিযানের আগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো: সাহেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কখনো নমুনা সংগ্রহ করি না। এ বিষয়ে আমরা বারবার আমাদের ফেসবুক পেজ ও বিভিন্নভাবে সতর্ক করে আসছি। আমরা বারবার বলেছি, রিজেন্টের নামে একটি ভুয়া চক্র কাজ করছে।