সাত বছর আগে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে হারিয়ে যাওয়া খুশি আরা নামের এক কিশোরীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে দীর্ঘ সময় পর পুুলিশ হারিয়ে যাওয়া খুশিকে খূঁজে বের করলেও সন্তানকে দেখে দৌড়ে পালান বাবা। এরপর হতভাগা খুশির ঠাঁই হয় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে।
খুশি গুলশান এলাকায় মাসুদুজ্জামান সরকার নামের একজনের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতো। ২০১৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাসার নিচে নামার পর থেকে সে নিখোঁজ হয়। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে খুশিকে না পেয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় জিডি করেন মাসুদুজ্জামান। সেইসঙ্গে এলাকায় মাইকিং ও বিভিন্ন পত্রিকায় নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিও ছাপান। একপর্যায়ে খুশির সন্ধান না পেয়ে হাল ছেড়ে দেন গৃহকর্তা মাসুদুজ্জামান।
জানা গেছে, রাজধানীর গুলশানের নিকেতন বি বøকের ৯১ ভবনের বাসিন্দা মাসুদুজ্জামান। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের খানসামা থানার টংবুয়ায়। বাসায় কাজের জন্য ২০১২ সালের শুরুতে সৈয়দ শুকুর আলী নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে খানসামার গুচ্ছগ্রাম পাকেরহাটের বাসিন্দা আজিজার রহমানের ১১ বছর বয়সি মেয়ে খুশিকে বাসায় নিয়ে যান। ভালোভাবেই কাজ করছিল খুশি। অটো রাইস মিলের ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামানের পরিবারের সদস্যরাও তাকে আপন করে নিয়েছিলেন।
এভাবে এক বছর পার হয়ে যাওয়ার পর ২০১৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হয় খুশি। পণ্য কিনতে বাসার নিচে নামার পর সে নিখোঁজ হয়। মাসুদুজ্জামান খুশিকে খুঁজে পেতে সকল চেষ্টা করছিলেন, তখন দিনাজপুর আদালতে মামলা করেন খুশির বাবা আজিজার। মামলায় আসামি করা হয় মাসুদুজ্জামান ও তার স্ত্রী শওকত আরা বেগম শিউলী, সৈয়দ আলী শাহ ও তার চালক খগেন্দ্র নাথ রায়কে। আদালতের নির্দেশে মামলাটি থানায় নথিভুক্ত করে তদন্তভার দেয়া হয় খানসামা থানাকে। ২০১৪ সালের ওই মামলার চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে বাদী আজিজার রহমান তাতে নারাজি দেন। এরপর আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পিবিআইও অধিকতর তদন্ত শেষে চ‚ড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। এতেও সন্তুষ্ট হতে না পেরে বাদী আবারও নারাজি প্রদান করলে আদালত পুনরায় অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। বর্তমানে মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে।
এক পর্যায়ে গত ৩০ জুন খুশি কড়াইলের বউ বাজার বস্তির খোকনের বাসায় থাকেন বলে জানতে পারে গুলশান থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ১ জুলাই মাসুদুজ্জামানের স্ত্রী শওকত আরা বেগম শিউলীকে সাথে নিয়ে খুশিকে উদ্ধার করেন গুলশান থানার এসআই মো. আনোয়ার হোসেন খান। এরপর গুলশান থানার পক্ষ থেকে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা দিনাজপুরের এসআই জাবিরুল ইসলামকে জানানো হয়।
খুশিকে উদ্ধার করা গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম জানান, খুশি আরা জানিয়েছে, ঘটনার দিন বাসা থেকে বের হওয়ার পর পথ হারিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সে গুলশানের গুদারাঘাট এলাকায় রাস্তার পাশে গাছের নিচে বসে কাঁদতে থাকে। ওই সময় গুলশান-১ ডিসিসি মার্কেটের ক্লিনার মনোয়ারা বেগম (খোকনের মা) তাকে দেখে নাম-ঠিকানা জানতে চাইলে নাম ছাড়া কিছুই বলতে পারেনি খুশি। পরে মনোয়ারা কড়াইল বস্তিতে তার বাসায় নিয়ে যান এবং তিনিই খুশিকে দীর্ঘ ৭ বছর লালনপালন করেন।
খুশি হারিয়ে যাওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দিনাজপুর সিআইডির এসআই জাবিরুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর খুশিকে দিনাজপুরে তার বাবার কাছে নেয়া হয়। কিন্তু খুশির বাবা তাকে দেখে দৌড়ে পালান। তিনি কোনোভাবেই মেয়েকে গ্রহণ করবেন না বলে জানান। এরপর খুশিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত পরিচয় নিশ্চিত হয়ে এবং সার্বিক দিক বিবেচনায় খুশিকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বর্তমানে খুশি সেখানেই রয়েছে।
তিনি বলেন, খুশি হারিয়ে যাওয়ার পর মামলা করে দীর্ঘদিন ধরেই মাসুদুজ্জামানের পরিবারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছিলেন আজিজার। সেইসঙ্গে মামলা নিষ্পত্তির জন্য মোটা অঙ্কের টাকাও দাবি করেছিলেন। আজিজার ৪টি বিয়ে করেছেন। তার সঙ্গে এখন কেউ থাকে না। একমাত্র ছেলেও বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে। বিয়ের বয়সি মেয়েকে নিয়ে তিনি আর নতুন বিপদে জড়াতে চান না বলে ধারণা করছে পুলিশ।