Breaking News

করোনায় মরলে দাফন হবে না?

৩ফরেনসিক্স ক্লাসে আমাকে প্রাসঙ্গিকভাবেই অনেক মৃতদেহ দেখাতে হয় – বিভিন্ন ধরণের মৃতদেহ । ফাঁস দেয়া, খণ্ডিত, বিকৃত, পচা-গলা, বজ্রাহত, বিদ্যুতায়িত, ছুরিকাহত, গুলিবিদ্ধ এরকম আরো অনেক রকম। এসব দেখে প্রতি বছরই আমার ফরেনসিক্স ক্লাসের শুরুর দিকে এক দুজন ছাত্র-ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে যায়। একটু পরেই তারা আবার ঠিক হয়ে যায়। এটাই স্বাভাবিক। পরিস্থিতিটা পুরোপুরি স্বাভাবিক রাখার জন্য আমি শুরুতেই ক্লাসে একটা কথা বলি । আমাকে যদি দুজন জীবিত মানুষ অথবা দুজন মৃত মানুষের সাথে ঘুমানোর চয়েস দেয়া হয় আমি সম্ভবত দুজন মৃত মানুষের সাথে ঘুমাবো । কারণ মৃত মানুষ দুটি আমার ঘুমের মধ্যে আমার গলা চেপে ধরতে পারবে না।

জীবিত মানুষ দুটির কাছ থেকে আমি এরকম নিশ্চয়তা পাবো না।
সাধারণভাবে একথাটা বলাই যায় একজন জীবিত মানুষের তুলনায় একজন মৃত মানুষ আমাদের খুব সামান্যই ক্ষতি করতে পারে।

করোনায় আক্রান্ত মৃতদেহ নিয়ে এখন বাংলাদেশে ধুন্দুমার চলছে। করোনায় মৃত ব্যক্তির সৎকারে লোকজন অংশ নিচ্ছে না, এমনকি নিজ পিতামাতারও না। অনেক এলাকায় করোনায় আক্রান্ত মৃতদেহ প্রবেশ করতে পর্যন্ত বাধা দেয়া হচ্ছে, দাফনে, সৎকারে বাধা দেয়া হচ্ছে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে কিছু অতিমাত্রার জ্ঞানীর (এদের বৈজ্ঞানিক বা ধর্মীয় জ্ঞান আছে বলে আমার মনে হয়নি – নাস্তিক বা ধর্মনিরপেক্ষরা আমাকে ক্ষমা করবেন কারণ আমি এখানে বিজ্ঞান এবং ধর্মকে এক করে ফেলছি। এটা আমি সজ্ঞানে করছি কারণ আমি একজন মুসলিম এবং আমি বিশ্বাস করি ইসলাম একটি বৈজ্ঞানিক জীবন ব্যবস্থা) প্রলাপ শুনেই কেবল আমার এই লেখা। আমি ধিক্কার দিচ্ছি তাদের যারা করোনায় মৃত মুসলিম ব্যক্তির লাশও পুড়িয়ে ফেলার উপদেশ দিচ্ছেন। আমার মনে হয় এতে করে করোনা বিষয়ে মানুষ আরো বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।

করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির চাইতে করোনায় আক্রান্ত জীবিত ব্যক্তি আপনার জন্য হাজার গুণ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই করোনায় মৃত ব্যক্তির চাইতে সৎকারে উপস্থিত ব্যক্তিটি যিনি সঠিক স্বাস্থ্যবিধি না মেনে আপনার সামনে উপস্থিত হয়েছেন সে আপনার জন্য লক্ষ লক্ষ গুণ ঝুঁকিপূর্ণ। এ পর্যন্ত একটিমাত্র ঘটনা পাওয়া গেছে যেখানে থাইল্যান্ডে একটি নিবন্ধের মাধ্যমে (নিবন্ধটি পরবর্তীতে সংশোধিত হয়)মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে পোস্ট-মর্টেম ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করা হয় যদিও এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা যায়নি যে মৃতব্যক্তির কাছ থেকেই উক্ত ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

করোনায় মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে আপনার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কেন কম সেটা জানার জন্য আপনার রকেট বিজ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই। আমরা ইতোমধ্যেই জানি করোনা মূলত ছড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির কথাবলা, হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে। মৃতব্যক্তি কথাও বলতে পারে না। হাঁচি-কাশিও দিতে পারে না। তাহলে তার কাছ থেকে করোনা ছড়াবে কি করে? আপনি নিশ্চিত থাকুন আপনার বাড়ির পাশের গোরস্থানে কিংবা পাশের বাড়ির পারিবারিক গোরস্থানে করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফন হলে ঐ মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে আপনার শরীরে করোনা সংক্রমণ ঘটবে না, অন্য কোন কারণে ঘটতে পারে।

তবে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না মৃতদেহ থেকে করোনা ভাইরাস কতটা সময় ধরে সংক্রামণ ঘটাতে পারে। এছাড়া যেকোন মৃত ব্যক্তির body-fluid সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বিশেষ করে যারা সরাসরি মৃতদেহের সংস্পর্শ আসছেন: পোস্টমর্টেম ডাক্তার, মৃতের গোসলদানকারী ব্যক্তি। তাদেরকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংশ্লিষ্ট বিধিগুলো মানতে হবে। কারণ মৃতব্যক্তির শরীরে হেপাটাইটিস বি, সি, এইচআইভি, ইবোলার মতো ভাইরাসও থাকতে পারে।

আশা করি আজ থেকে আপনি করোনায় আক্রান্ত মৃতদেহ দাফনে বাধা দেবেন না। পুড়িয়ে ফেলার পরামর্শও দেবেন না। ইসলামে মহামারীতে মৃত ব্যক্তিকে শহীদের মর্যাদা দেয়া হয়েছে আর আপনি যখন একজন শহীদের দাফনে বাধা দিচ্ছেন তখন ধর্মীয় দৃষ্টিতে কী জঘণ্য অপরাধ করছেন তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।

আপনি একজন ব্যক্তির সৎকারে অংশগ্রহণ নাইবা করলেন, সেটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি অনুসারে সঠিক সৎকার পাওয়া প্রতিটি মানুষের অধিকার। এই অধিকার কেড়ে নেবেন না, বাধা দেবেন না। আপনি করোনায় মরলে তখন কী হবে?

Check Also

জুলুম থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তে বলেছেন

মহানবী (সা.) যেকোনো ধরনের জুলুম থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *