Breaking News

সারাদিন রাজমিস্ত্রির যোগালির কাজ, রাতে পড়ে জিপিএ-৫

রাজমিস্ত্রির যোগালির কাজ করে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছে মো. মামুন নামে এক শিক্ষার্থী। সে পটুয়াখালী সদর উপজেলার মরিচবুনিয়া টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। রোববার (৩১ মে) এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে দেখা যায় মামুন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের গেরাখালী গ্রাম এলাকার বাসিন্দা কৃষক আবদুল বারেক মাতব্বরের ছেলে মামুন। বারেকের দুই স্ত্রী। প্রথম সংসারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। পরে কহিনুর বেগমকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এই সংসারে তার এক মেয়ে ও এক ছেলে মামুন।

২০১৫ সালে দক্ষিণ গেরাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৪.৫০ অর্জন করে মামুন। এরই মধ্যে বোনের বিয়ে হয়ে যায়। তার বাবা বারেক বার্ধক্যজনিত কারণে কোনো কাজ করতে পারেন না। ফলে শুরু হয় মামুনের জীবন যুদ্ধ।

মামুন জানায়, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তার বাবা পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে কোনো কাজ করতে পারেন না। তাই ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজে আয় করা শুরু করে মামুন। নির্মাণ শ্রমিক নজরুল মিস্ত্রি তাকে জোগালির কাজ শেখান। এরপর প্রতি মাসের সাপ্তহিক ছুটির দিন ও বিভিন্ন সরকারি ছুটির দিনে রাজমিস্ত্রির যোগালির কাজ করত সে। সেখান থেকে আয় করা টাকা দিয়ে পরিবারের খরচ ও নিজের পড়াশোনার খরচ চলতো। ২০১৫ সালে রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজের শুরুতে ৪৩০ টাকা পেত সে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মজুরিও বেড়েছে। বর্তমানে সে পাঁচশ টাকা মজুরিতে কাজ করছে।

মামুন বলে, কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরেছি। রাজমিস্ত্রির যোগালির কাজ টাকার জন্য করেছি আর পড়াশোনা নিজের জন্য করেছি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিলে সময় নষ্ট হবে তাই পালিয়ে বাড়ি ফিরেছি। পরিবারের দায়িত্ব ও নিজের পড়াশোনার কথা চিন্তা করলে আর বন্ধুদের দিকে তাকাতে মন চাইতো না। কারণ স্বপ্ন পূরণ করতে হলে পড়াশোনা করতে হবে। আমার কোনো বন্ধু নেই। রাজমিস্ত্রির যোগালির কাজ সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হলে বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ৮টা বাজতো। এরপর পরিপাটি হয়ে সাড়ে ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত পড়াশোনা করতাম। আমি যে কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি তার ফল আল্লাহ দান করেছেন।

মামুন বলে, আমি স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। আমার স্বপ্ন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পেশা শিক্ষক হওয়া। আমি শিক্ষক হয়ে আমার মতো অন্য ভাই-বোনদের নিজের খরচে পড়াশোনা করাতে চাই। তারা মানুষ হয়ে শিক্ষার আলো ছড়াবে।

মামুনের মা কহিনুর বেগম বলেন, আমার স্বামী কোনো কাজ করতে পারে না। ছেলে পড়াশোনায় ভালো। সে নিজে পড়াশোনা করে এ পর্যন্ত এসেছে। স্কুলের স্যাররা অনেক সহায়তা করছে।

নির্মাণ শ্রমিক নজরুল মিস্ত্রি বলেন, মামুন পঞ্চম শ্রেণি থেকে আমার কাছে রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ শিখেছে। সে কাজ করে তার পরিবার ও নিজের পড়াশোনা চালায়। সে পড়াশোনায় অনেক ভালো। জিপিএ-৫ পেয়েছে শুনে আমি অনেক খুশি হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। আমরা বেকার। মামুনেরও আয় বন্ধ। এর মধ্যে কলেজে ভর্তি শুরু হলে ছেলেটা সমস্যায় পড়বে।

মরিচবুনিয়া টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন জানান, এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় ৫৮ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ৫১ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। চারজন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে দরিদ্র মামুনও জিপিএ-৫ পেয়েছে। মামুনের পাশে সমাজের বিত্তবানরা দাঁড়ালে সে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে।

Check Also

জুলুম থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তে বলেছেন

মহানবী (সা.) যেকোনো ধরনের জুলুম থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *