Breaking News

কেউ এগিয়ে না আসায় মুক্তিযোদ্ধার চিতায় আগুন দিলেন পুলিশ কর্মকর্তা

মুক্তিযোদ্ধা কমলেশ চক্রবর্তী ওরফে ভানু (৬৫) ফরিদপুর শহরের নিলটুলীর বাসিন্দা। যুবক বয়সে স্বাধীনতার সংগ্রাম থেকে শুরু করে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দেশ-মনবতা-নিজ ধর্ম (হিন্দু) মন্দিরের সেবা করে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তার নিজের লাশ দাহ করতে এগিয়ে আসেননি তার সম্প্রদায়ের একজন মানুষও।

হাসপাতাল থেকে মরদেহ কে ছাড়িয়ে আনবে? কে করবে দাহ? পরিবারের বাকি সদস্যরাও করোনা আক্রান্ত।

সেই মুহূর্তে মুক্তিযোদ্ধা কমলেশের মৃতদেহ দাহ করার দায়িত্ব নেন মানবতার সেবায় অতন্দ্র প্রহরী ফরিদপুরের অভিভাবক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি।

তার নির্দেশে ও ব্যবস্থাপনায় মুক্তিযোদ্ধা কমলেশের মৃতদেহ দাহ করে নেতৃবৃন্দ ও সামাজিক সংগঠন তরুছায়ার তরুণরা।

তরুছায়ার সভাপতি খালিদ মাহমুদ সজিব জানান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম রেজার সাথে সমন্বয় করে তার সংগঠনের ৫ জন সদস্যকে নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ ছাড়িয়ে আনেন। লাশ নিয়ে যখন অম্বিকাপর শ্মাসানঘাটে পৌঁছান তখন শুরু হয় নতুন সমস্যা। করোনা ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাহ করতে বাধা দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে এলাকাবাসী।

খবর পেয়ে স্থানীয় সাংসদের নির্দেশে ফরিদপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এ এইচ এম ফোয়াদ, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী বরকত ইবনে সালাম স্থানীয়দের বুঝিয়ে প্রতিরোধ ভেঙে দেন। তারপর যখন সবাই চলে গেলে দাহ করার একজন মানুষ নেই। হিন্দু সম্প্রদায়ের রীতিনীতি পালনের জন্যও কেউ ছিল না। শেষ পর্যন্ত ফরিদপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাশেদুল ইসলাম কয়েক পুলিশ সদস্যকে সাথে নিয়ে নিজেই চিতা সাজিয়ে দাহ কাজ সম্পন্ন করেছেন।

রোববার (৩১ মে) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মুক্তিযোদ্ধা কমলেশ চক্রবর্তী।

তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন। এছাড়াও তিনি ফরিদপুর উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই পুত্রসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত ২১ মে ওই মুক্তিযোদ্ধার শরোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর দুইদিন পর ২৩ মে তাকে ফরিদপুরের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। গত শুক্রবার তিনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে তাকে আইসিইউ ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। ওই ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মারা যান তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান আরও জানান, ওই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, ভাইসহ তার পরিবারের আরও ছয় সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাহ কাজে বাধা দেয়ার খবরে শ্মশানে পৌঁছাই। পরে স্থানীয়দের সরিয়ে দিয়ে নিজেই পুলিশের আরও কয়েক সদস্যের সহয়তায় দাহ কাজ সম্পন্ন করি। এরআগে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সেখানে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

Check Also

জুলুম থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তে বলেছেন

মহানবী (সা.) যেকোনো ধরনের জুলুম থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *