বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে অবিলম্বে মজুরি বোর্ড গঠন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ, ৬০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা প্রদান, পূর্ণাঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থা চালুসহ ৭ দফা দাবিতে বিক্ষোভ শেষে বিজিএমইএ নেতাদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের কয়েকটি সংগঠন।
রবিবার (৬ নভেম্বর) বেলা ১২টায় উত্তরার দীয়াবাড়িতে বিজিএমইএ ভবনের সামনে এই সমাবেশ করেন পোশাক শ্রমিকরা।
সমাবেশ শেষে শ্রমিক নেতারা বিজিএমইএ’র অতিরিক্ত সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম এবং মনসুর খালেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্মারকলিপি দেন এবং মজুরি বৃদ্ধির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করেন।
সমাবেশে অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়কারী শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলাম সবুজের সভাপতিত্বে রাজু আহমেদের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন— শ্রমিক নেতা মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, তাসলিমা আখতার, মাসুদ রেজা, শবনম হাফিজ, বিপ্লব ভট্টাচার্য প্রমুখ।
তারা বলেন, দেশের রফতানি আয়ের সর্বোচ্চ খাত পোশাক তৈরি শিল্প। এই শিল্প ৪০ লাখ শ্রমিকের রক্ত-ঘামে দেশ টিকে আছে। কিন্তু বর্তমান বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যর ঊর্ধ্বগতি, অপরদিকে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে শ্রমিকের জীবনে এক চরম সংকট নেমে এসেছে। খাদ্য দ্রব্য ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির লাগাম ছাড়া পরিস্থিতিতে শ্রমিকের ৮ হাজার টাকা বেতনে জীবন চলা দায় হয়ে পড়েছে। তাই অবিলম্বে মজুরি বোর্ড গঠন ও ২৫ হাজার টাকা মজুরি করার দাবি জানান তারা।
নেতারা বলেন, ২০১৮ সালে নতুন মজুরি ঘোষণারর সময় থেকে গত ৪ বছরে চাল ১৭ শতাংশ, ডাল ৯৬ শতাংশ, আটা ৭২ শতাংশ, তেল (বোতল) ৭৮ শতাংশ, লবণ ৪০ শতাংশ ও ডিম ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একজন শ্রমিক যদি তার পরিবারের জন্য প্রায় ২০০ টাকা দরে ৫ লিটার তেল কেনেন, তাহলে তার মোট মজুরি ৮ হাজার টাকার মধ্যে এক হাজার টাকাই কেবল তেল কেনার খরচেই শেষ হয়ে যায়। তাই শ্রমিক পরিবারগুলো বর্তমানে তেল কেনার পরিমাণ কমিয়ে ফেলেছে। মাসে যদি আগে লাগতো ৫ লিটার, সেখানে শ্রমিকরা এখন ৩ লিটার বা তারও কম কিনছে পরিবারের জন্য। শ্রমিকরা বর্তমানে ৮ হাজার টাকায় চরম অচল অবস্থায় পড়েছে।
নেতারা আরও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতি সামগ্রিক অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করলেও পোশাক খাত সেটা সামলে তাদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখছে। এই পরিস্থিতি শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়ে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি না করলে শ্রমিক এবং শিল্প দুই বিপর্যস্ত হবে।
তারা বলেন, উদ্যোক্তারা সব পণ্য চড়া দামে কিনলেও তারা কেবল শ্রমিকের শ্রমের মূল্য বাড়াতে চায় না। মজুরি বোর্ড গঠন না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের মহার্ঘভাতা ও রেশনিংয়ের দাবি জানান নেতারা। অবিলম্বে মজুরি বোর্ড গঠন এবং ২৫ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারনের উদ্যোগসহ ৭ দফা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানানো হয়।