সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পুত্র শাহাতা জারাব এরিক বারিধারায় প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় অবরুদ্ধ আছেন। তার ব্যক্তিগত ফোনটিও কেড়ে নিয়েছেন মা বিদিশা এরশাদ। এমনটা দাবি করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মো. মামুনুর রশীদ।
বুধবার (১৬ নভেম্বর) এরিকের নিরাপত্তা চেয়ে ও বিদিশার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এ আবেদন করা হয়েছে।
আবেদনের কপি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ডিএমপি কমিশনার ও পুলিশের গুলশান জোনের উপ-কমিশনার বরাবর পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, ট্রাস্টের পরিচালকরা এরিকের সঙ্গে দেখা করতে ও কথা বলতে পারছেন না। কয়েকদিন আগে এরিক তার মা বিদিশার হাত থেকে নিজেকে উদ্ধার করার জন্য এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশিদকে ফোন করেন। সেই কথোপকথনের অডিও প্রকাশ হয়। সেখানে এরিককে বলতে শোনা গেছে, ‘আমাকে বাঁচান। ওনাকে (বিদিশাকে) এখান থেকে না সরালে আমি আত্মহত্যার পথ বেছে নেবো।’
ওই ফোনকল পেয়ে এরশাদ ট্রাস্টের পরিচলনা বোর্ডের কর্মকর্তারা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। ফলে এরিকের নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন তারা।
আবেদনে বলা হয়, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবদ্দশায় ওনার সন্তান শাহাতা জারাব এরশাদ এরিকের ভরণ-পোষণসহ সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালে নিজ নামে ট্রাস্ট গঠন করেন। যার প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পরে ওই বছরের ১৪ জুলাই তার মৃত্যুর পর ট্রাস্টি বোর্ডের সভায় সব সদস্যের সিদ্ধান্তক্রমে মেজর (অব.) খালেদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি ২০২০ সালের ১২ জুলাই মারা গেলে পুনরায় ট্রাস্টি বোর্ডের সব সদস্যের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে ট্রাস্টের দায়িত্ব নেন কাজী মো. মামুনুর রশিদ।
ট্রাস্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত বোর্ডের সব সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে ট্রাস্ট পরিচালনা করে আসছেন তিনি। এর মাধ্যমে এরিক এরশাদের পড়াশোনা, চিকিৎসাসহ যাবতীয় কার্যাবলি সম্পাদন করা হচ্ছে। এরিকের সার্বিক দিক বিবেচনা করে ট্রাস্ট গঠনকালে ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের রেজিস্ট্রি করা দলিলে উল্লেখ করেন, সুবিধাভোগী শাহাতা জারাব এরশাদ এরিকের মা বিদিশা সিদ্দিক ট্রাস্টের তফসিলে বর্ণিত কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ভোগদখল বা কোনো প্রকার সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। এই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র মানবিক দিক বিবেচনা করে তাকে প্রেসিডেন্ট পার্কে আসা-যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, যা ট্রাস্টের সব সদস্য জানেন।
এতে আরও বলা হয়, মৌখিক অনুমতি পাওয়ার পরে তিনি (বিদিশা সিদ্দিক) মাঝেমধ্যে প্রেসিডেন্ট পার্কে রাত্রীযাপন করতেন। যা ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা জানতে পারলে বিদিশা সিদ্দিককে ট্রাস্টের দলিলে উল্লেখিত নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অবহিত করা হয়। তবে প্রেসিডেন্ট পার্কে রাত্রীযাপনের বিষয়টি বেআইনি বলা হলেও তা আমলে নেননি তিনি। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও দলবল নিয়ে প্রেসিডেন্ট পার্কে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন বিদিশা, যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও ট্রাস্ট আইনের পরিপন্থি বলেও ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
আবেদনে আরও বলা হয়, গত ২ অক্টোবর এরিক এরশাদের (সুবিধাভোগী) মৌখিক ও লিখিত নিরাপত্তাহীনতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাস্টি বোর্ডের সব সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ প্রেসিডেন্ট পার্কে গেলে বিদিশা সিদ্দিক তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এতে সবাই বিস্মিত হন। এমনকি এরিকের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি তার নেতা-কর্মীদের দ্বারা চেয়ারম্যানসহ বোর্ড সদস্যদের হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। তাই প্রেসিডেন্ট পার্ক ও এরিকের নিরাপত্তা নিয়ে তারা (ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্যরা) শঙ্কিত। এরিকের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ফোনটিও মা বিদিশা তার কাছ থেকে কেড়ে নেন। বর্তমানে প্রেসিডেন্ট পার্কে দলীয় লোকদের নিয়োগ দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন তিনি বলেও উল্লেখ করা হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে শাহাতা জারাব এরশাদ এরিককে বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। একই সঙ্গে এরিককে এককভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে সত্য ঘটনা উদঘাটন ও দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয় ওই আবেদনে।