‘কয়েকজন চেঁচিয়ে বলল, এই যে মাইনকা যায়’। এরপর প্রায় ২০-৩০ জন মানুষ আমার গাড়ি চারপাশ থেকে ঘেরাও করে ফেলে। তখন আমি নিরুপায় হয়ে গাড়ির দরজা খুলে পুলিশকে খোঁজ করতে গেলে তারা কয়েকজন আমার সমস্ত মুখমণ্ডলে বেধড়ক ঘুষি মারা শুরু করে। এসময় তাদের স্লোগান ছিল, ‘এই আওয়ামী দালাল মানিককে এখনই শেষ করো’।
বুধবার বিকালে রাজধানীর পল্টন এলাকায় নিজের ওপর হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে গণমাধ্যমকে এমনটাই বললেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
মানিক বলেন, ‘বিকালে আমি মতিঝিল থেকে একুশে টেলিভিশনের পথে রওনা দিয়েছিলাম। যখন পল্টন থানার কাছাকাছি আসি, দেখলাম সেখানে বিএনপি জামাতের জমায়েত। আমি তখন মাইকে শুনছিলাম, যারা সেখানে জমায়েত ছিল তারা ঘোষণা দিল সব গাড়ি নির্বিঘ্নে যেতে পারবে, কোনো গাড়ি থামানো হবে না। সব গাড়ি নিরাপদে যেতে পারবে। এরপর আমরা আশ্বস্তবোধ করলাম।’
‘কিছুটা সামনে এগিয়ে দেখলাম একটা পুলিশের গাড়ি। আমার গানম্যান নেমে তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলল আপনারা আসেন সমস্যা হবে না। কিন্তু কিছুদূর আগোনোর পরেই ‘কয়েকজন চেঁচিয়ে বলল, এই যে মাইনকা যাই’। তখন প্রায় ২০-৩০ জন মানুষ আমার গাড়ি চারপাশ থেকে ঘেরাও করে ফেলল। আমি তখন নিরুপায়, আমার সঙ্গে পুলিশও নেই। দেখলাম কি হবে ভেবে আমি গাড়ির দরজা খুলে পুলিশের খোঁজ করতে গেলাম। তখনই তারা আমাকে মারধর শুরু করল। তারা কয়েকজন আমার নাখ, মুখ, দাঁত, সমস্ত মুখমণ্ডলে বেধড়ক ঘুষি মারা শুরু করল। এবং তাদের স্লোগান ছিল, ‘এই আওয়ামী দালাল মানিককে এখনই শেষ করো’। আমার সাথে আমার ড্রাইভার কেউ মেরেছে। এরপর আমার গানম্যান যখন ফিরে এল তাকেও মারে তারা। এসময় তাদের লাঠির আঘাতে আমার গাড়িরও বেশ ক্ষতি হয়েছে।’
মানিক আরও বলেন, ‘এ ঘটনার পর কমিশনার সাহেব আমাকে ফোন করেছেন এবং আমাকে জানিয়েছেন সেখানে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হয়ত আক্রমণকারীদের চেনা যাবে। উনি আশ্বাস দিয়েছেন সেটি তিনি করবেন।’
সাবেক এ বিচারপতি বলেন, ‘বিএনপি দাবি করছে তাদের মিটিং সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। কতটা শান্তিপূর্ণ হবে তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ আজ আমি নিজেই। এরপর আমার দাবি তাদের মিটিং আর চলতে দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ, আজকে আমাকে আক্রমণ করেছে,কালকে আরও অনেকের ওপর আক্রমণ করবে। আরও অনেকেই আছে তাদের লিস্টে। তারা তিনমাস যে জ্বালাও, পোড়াও করেছিলো নির্বাচনের আগে সেটা আমরা ভুলে যায়নি। এজন্য এখনই যদি তাদের না থামায় তবে সামনে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে যা বিদায়ী পুলিশ কমিশনার ঢাকার বলে গেছে।’
সবশেষে খবরে জানা গেছে, এ ঘটনায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, তার গাড়িচালক ও গানম্যানের ওপর হামলা ও তার গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় গানম্যান রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে বুধবার রাতে পল্টন থানায় একটি মামলা করেছেন। এতে বিএনপির অর্ধশতাধিক (অজ্ঞাত) নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্রদলের চার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার রাত ও আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান সুমিত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন খান, কলাবাগান শাখা ছাত্রদল কমিটির সদস্য মো. রবিন খান ও মো. সাগর।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন মিয়া ঢাকা টাইমসকে জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।